ডেস্ক নিউজ
প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্রছাত্রী পাবে ইউনিক আইডি। এই আইডিতে ১০ বা ততোধিক ডিজিটের শিক্ষার্থী শনাক্ত নম্বর থাকবে, যা পরবর্তী সময় হবে ঐ শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না। আগামী বছরের শুরু থেকে আইডি দেওয়া শুরু হবে।
এই আইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থী শনাক্ত করা হবে। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে। ভর্তি, বই বিতরণসহ শিক্ষার্থীর সব ধরনের কাজেই এই আইডি ব্যবহার হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন জেনারেলের কার্যালয়, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনিআইডি) অনুবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তর সম্মিলিতভাবে এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
ইউনিক আইডির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. শামসুল আলম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শিগিগর শুরু হবে ডাটা এন্ট্রির কাজ। এরপর তৈরি হবে ইউনিক আইডি। আগামী বছরের শুরুতেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডি দেওয়া যাবে বলে আশা করছি। তিনি জানান, প্রতিটি স্কুলের দুজন শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের তথ্য ইনপুট দেবেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলেই তার জন্মনিবন্ধন হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায় ১৮ বছর পূর্ণ হলে। কিন্তু যারা প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী, তারা এই সিস্টেমের বাইরে। এ জন্য তাদের সিস্টেমের মধ্যে আনতেই ইউনিক আইডি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরির জন্য বিদ্যালয় পর্যায়ে ডাটা এন্ট্রি দেওয়া শুরু হবে আগামী মাসে। প্রথম ধাপে ৮০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি করা হবে। সেটি সফল হলে ধাপে ধাপে সব শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনা হবে। ফরম পূরণে নানা ভোগান্তি : ইউনিক আইডির জন্য চার পৃষ্ঠার ফরম পূরণ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষার্থীর নাম, জন্মনিবন্ধন নম্বর, জন্মস্থান, জেন্ডার, জাতীয়তা, ধর্ম, অধ্যয়নরত শ্রেণি, রোল নম্বর, বৈবাহিক অবস্থা, প্রতিবন্ধিতা, রক্তের গ্রুপসহ নানা তথ্য যুক্ত করতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছে, এই ফরম পূরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আর এই কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকে।
কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার নামের ভুল থাকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই এই ফরম পূরণ করতে পারছে না। আবার কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করছে।
এই ছক পূরণ করতে গিয়ে নতুন করে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, যে সব শিক্ষার্থীর ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন আছে, তাদের অভিভাবকদের শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই হবে। তবে যে সব শিক্ষার্থীর ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন নেই, তাদের অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন দুটিই লাগবে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহকারী স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা. এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সাল থেকে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। এর আগে হাতে লেখা সনদ দেওয়া হতো। যারা হাতে লেখা সনদের পরিবর্তে ডিজিটাল সনদ চাইছেন, তাদের সব তথ্য দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। যাচাই করে তাদের ডিজিটাল জন্ম সনদ দেওয়া হবে।
অসীম সাহা নামের এক অভিভাবক জানান, অভিভাবকদের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে তাদের বাবা-মার জন্মনিবন্ধনের তথ্য উপস্থাপন করতে হচ্ছে। এদের অধিকাংশ এখন মৃত। বেশির ভাগই জন্মনিবন্ধন কার্ড করেননি। তাই ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গিয়ে নতুন জন্মনিবন্ধন করতে পারছেন না অনেকেই। আবার ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জন্মনিবন্ধন কার্ড করতে গেলে কোথাও কোথাও দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
আরিফুল নামে এক অভিভাবক জানান, শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তথ্য ফরম সংগ্রহ করে ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্রসহ রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ফলে ভোগান্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থ ব্যয়ও। এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রক্ত পরীক্ষা নির্ণয়ে বাড়তি টাকা নিচ্ছে।
ইউনিক আইডির সঙ্গে জড়িত প্রতিটি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সহায়তা করার জন্য সরকারি আদেশ জারির অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।