ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশের এনজিওগুলোর বিদেশী তহবিল নিবিড় মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। হিউম্যান রাইট ওয়াচ, অধিকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্টসহ বেশ কিছু এনজিও রয়েছে সরকারের এই নজরদারির তালিকায়। এনজিওগুলোর ফান্ড কোথা থেকে আসছে, তাদের কার্যক্রম কী ও ফান্ড কোথায় ব্যয় হয় তা কড়া মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। সম্প্রতি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির চলতি বছরের প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কমিটির আহবায়ক। এ ছাড়াও এতে আটজন মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ২৯ জন সদস্য রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সরকার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় বেশ কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে সরকার হঠানোর মতো তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে একটি প্রতিষ্ঠিত এনজিওর বিরুদ্ধে তৎকালীন বিরোধী দলের সাথে মিশে সরকার হঠানোর কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তখন থেকেই সরকার এসব এনজিওর ওপর কঠোর নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া কিছু কিছু এনজিও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদে মদদ দেয়, বিদেশ থেকে গরিবদের নামে টাকা এনে নিজেরা আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকায় সেসব এনজিওর কর্মকাণ্ডের ওপর কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। একই সাথে এনজিওগুলো কোথা থেকে ফান্ড নিয়ে আসে, তাদের কার্যক্রম কী, কোথায় সেই ফান্ড ব্যয় হয়-এসব বিষয়েও নজরদারি প্রয়োজন। কারণ বিভিন্ন সময় এনজিওগুলো শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটিয়েছে। কোনো কোনো এনজিওর বিরুদ্ধে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করার তথ্য সরকারের কাছে আছে।
এ ছাড়া ওই সভায় সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে ল ফার্ম ও লবিস্ট নিয়োগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পদক্ষেপ মনিটরিংয়ের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথাও এতে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়। কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির তৎপরতা বন্ধের জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর বিষয়টি সিদ্ধান্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
এ দিকে এনজিওর বিষয়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল নুর খান নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার মূলত দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায় যে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো কোন পরিস্থিতিতে কতটুকু কার্যকর আছে।
তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। প্রতিষ্ঠানটির ফোকাল পারসন এবং সিলেট ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মো: ইরফানুজ্জামান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি। আমরা যা কিছু করছি তা সরকারকে জানিয়েই করি। আমরা কোনো সভা- সেমিনার করলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করি। আমাদের সাথে স্থানীয় প্রশাসন, জুডিশিয়াল কর্মকর্তারাও থাকেন। অনেক সময় তাদের অনুষ্ঠানগুলোতেও আমরা ফান্ডিং করি।