ডেস্ক নিউজ
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের একবছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এদেশের মানুষ ভালো-কিছুর স্বপ্ন দেখা ভুলেই গিয়েছিল।
‘মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের। স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিন ভাগের দুই-ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রমত্তা পদ্মানদীর উপর সেতু নির্মিত হবে আর সেই সেতু দিয়ে গাড়ি বা ট্রেনে সরাসরি পারাপার করতে পারবে- এটা ছিল মানুষের স্বপ্নেরও অতীত। আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চলেছি।
তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। তিন ভাগের দুই-ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মাসেতুর প্রায় অর্ধেকাংশ এখন দৃশ্যমান।
রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাতালরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। ’
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেলের চলমান নির্মাণ কাজের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চন্দ্রা মহাসড়ক চার-লেনে উন্নীত করার পর চন্দ্রা-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশন-রংপুর এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার চলমান কাজের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
রেলের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন কোচ ও ইঞ্জিন সংযুক্তি, ই-টিকেটিং এবং নতুন নতুন ট্রেন চালুর ফলে রেলপথ যোগাযোগে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ১২২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সেতুর উপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু হবে বল আশা করছি। দেশের সব জেলাকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার যুক্ত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমান বহরে ৬টি নতুন ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।’
দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতোমধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ এবং ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছে বলে জানান তিনি।
টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করতে রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা ও মহেশখালীতে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কাজের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১১ বছরে ২০ হাজার ১০২ জন নতুন চিকিৎসক এবং ২১ হাজার ৬৯৭ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি করে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপনের কাজ চলছে।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রতি বছর ২ কোটি ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপ-বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৮৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ এবং ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ কোটিরও বেশি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
চলতি মেয়াদে সরকারের দেড় কোটি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কথা পুনরুল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
** শুধু প্রতিবেশী নয়, অনেক উন্নত দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ
** জাতিকে নতুন জীবনীশক্তি দেবে ‘মুজিববর্ষ’
** জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী