ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যান্য অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। বলা হচ্ছে আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী উদীয়মান ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
পলাশী যুদ্ধের প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষার পালা শেষে ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত উপমহাদেশের জনগণ পেয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত নামের দুই দেশ। পাকিস্তানিরা যখন বাঙালিদের নতুন করে শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ঠিক তখনই শতাব্দীর মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভু্যদয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ছাপ্পান্নর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, আটান্নর মার্শাল ল-বিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভু্যত্থানের পথ পেরিয়ে সত্তরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক। পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় কারাগারের অভ্যন্তরে থাকা, কয়েকবার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি, অসংখ্য মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাবরণের পরও এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেওয়া তার বক্তব্য বাঙালিদের ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল। হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে প্রতিরোধ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বানে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে প্রত্যক্ষভাবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক হটকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার আপামর জনতা। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ২৫ মার্চ পর্যন্ত নানান ঘটনার মধ্যদিয়ে ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১ মার্চ, ১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদে যোগদানের অস্বীকৃতি জানানোর প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ, ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেন। ২ মার্চ, ১৯৭১ সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি। কারফিউ ভেঙে বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন। বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ, গুলিবর্ষণ। পল্টনে জনসভা ও গণমিছিলের ডাক, ভাষণ দেবেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৩ মার্চ, ১৯৭১ বিভিন্ন স্থানে মিছিলে গুলিবর্ষণ, ঢাকায় ২৩ জন নিহত, চট্টগ্রামে ৭৫ জন। ঢাকা, সিলেট ও রংপুরে কারফিউ জারি। ৪ মার্চ, ১৯৭১ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ১১৩নং সামরিক আইন আদেশ জারি। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা ১২১, খুলনায় নিহত ৬। ঢাকায় কারফিউ প্রত্যাহার। ৫ মার্চ, ১৯৭১ টঙ্গীতে গুলিবর্ষণ, ৪ জন নিহত ২৫ জন আহত। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৮। রাজশাহী রংপুরে আবার কারফিউ। ৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়ার ভাষণ, ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের ডাক। জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ। টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ। ৭ মার্চ, ১৯৭১ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণদান। জনগণের প্রতি নতুন নির্দেশ ও অধিবেশনে যোগদানের চারটি শর্ত প্রদান। অধিবেশনে যোগদানে বঙ্গবন্ধুর চার শর্ত-
১. অবিলম্বে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করতে হবে; ২. সব সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে; ৩. নিরস্ত্র গণহত্যার তদন্ত করতে হবে; ৪. নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রিলে না করার প্রতিবাদে ঢাকা বেতারের বাঙালি কর্মীদের অসহযোগিতার কারণে বিকালে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা বেতার। সন্ধ্যা ৭টায় বেতার ভবনের সামনে বোমা নিক্ষেপ। নিয়াজিসহ পাঁচজনকে সহকারী সামরিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। ৮ মার্চ, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের একাত্মতা ঘোষণা।
২০ মার্চ, ১৯৭১ মুজিব-ইয়াহিয়া চতুর্থ দফায় বৈঠক। সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
২১ মার্চ, ১৯৭১ ইয়াহিয়া-মুজিব অনির্ধারিত বৈঠক। ৭০ মিনিটের এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
২২ মার্চ, ১৯৭১ ভুট্টোর উপস্থিতিতে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। এদিকে লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ডাক বঙ্গবন্ধুর। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত। পত্রিকায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পরিকল্পিত বাংলাদেশের পতাকার মাপ ও বিবরণ প্রকাশ। ২৩ মার্চ, ১৯৭১ দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালন। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোয়, বাড়িতে, গাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৪ মার্চ, ১৯৭১ শেখ মুজিবের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের বৈঠক। কোনো প্রকার নতি স্বীকার না করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এদিন রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অপারেশন সার্চ লাইটের আওতায় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই বর্তমান সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যান্য অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। বলা হচ্ছে আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে শক্তিশালী উদীয়মান ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
দেশের এই অগ্রসরমান ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য ধৈর্য, ন্যায়-নিষ্ঠা, সততা, নৈতিকতা, আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ আরও পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিয়েছে। মূলত এ বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীদের বিজয়। এ বিজয় একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১০ বছরের বহুবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ডের স্বীকৃতিরই প্রকাশ। নির্বাচনের এই ফলাফল বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বেরই প্রতিফলন। এখন আমাদের একটাই স্বপ্ন জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাকে গড়ে তোলা।
আমরা জানি, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকার বিগত ১০ বছরে নির্বাচনী ইশতেহারের অনেক দফার বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে, যা চলমান রয়েছে। এবার অনেক নতুন বিষয়ের প্রতিশ্রম্নতিও ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, সরকার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল গ্রহণ করবে। তবে যেসব বিষয় নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কিন্তু সেগুলো দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর দিকেও সমান দৃষ্টি প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য প্রযোজ্য অঙ্গীকারগুলোর একটি তালিকা তৈরিপূর্বক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তার কাজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি চেক লিস্ট রাখবে, যাতে সব কর্মকান্ডই প্রধানমন্ত্রী মনিটরিং করতে পারেন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে একটি টিম গঠন করা যেতে পারে, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে যাবতীয় পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করবে। টিমকে সহায়তা করার জন্য অভিজ্ঞ, দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সরকার যদি নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে আন্তরিক হয়, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা সহজেই পূরণ করা সম্ভব হবে। ফলে আগামী পাঁচ বছর পর যখন আবার ভোটারদের কাছে রাজনৈতিক নেতারা যাবেন, তখন নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের সুফল বার্তাটিই হবে মুখ্য হাতিয়ার।
জনগণ কিছু বিষয়ের আশু সমাধান চায়। যেমন- শিক্ষা ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুচ্ছ প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগদান ও বিদ্যালয়গুলো সংস্কার আবশ্যক। ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ। ঢাকা শহরকে ১০-১২টি বাস কোম্পানির আওতায় নিয়ে এসে উন্নতমানের জনবান্ধব পরিবহন সেবা চালু করা। ছোট রাস্তা ও রুটের জন্য থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো ‘টুকটুক’ বা ১৬ সিটের ইলেকট্রিক যানের অনুমতি দেওয়া। এগুলো দৃশ্যমান করতে এক বছরের অধিক সময়ের দরকার হবে না। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধি করে ৩২-এ উন্নীত করা। বেকারত্ব দূর করার জন্য প্রতি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একটি করে পেশাভিত্তিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বা কেন্দ্র চালুকরণ। গুরুত্বপূর্ণ বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, আবাসিক এলাকায় সরকারি পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন চালু করা দরকার। আরও প্রয়োজন মাদক নির্মূলের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ও সামাজিক আন্দোলন কার্যক্রম যুগপৎ গ্রহণ করা।
সরকারের প্রতিটি সেবাকেন্দ্র-বিশেষ করে ভূমি অফিস, সিটি করপোরেশন, বিদু্যৎ, গ্যাস, ওয়াসা, আয়কর, শিক্ষা অফিস, হাসপাতাল, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, খাদ্য অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআরটিসি, বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশল বিভাগ, শুল্ক ও বন্দর, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ অসাধু চক্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ এখনো ভুক্তভোগী। মাদক ও দুর্নীতি আমাদের সমাজে ভয়াবহ থাবা বিস্তার করেছে। বিশেষ করে যুবসমাজে উঠতি তরুণ-তরুণীরা মাদকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অভিযান ঘোষণার প্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে অনেক অপরাধী আইনের আওতায় চলে আসে। এতে অপরাধ দমনসহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী সততা, দক্ষতা, আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধমূলক ঘটনা সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি সরকারি অন্য দপ্তরগুলোর দুর্নীতিও নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বর্তমান সরকারের একটি সময়োপযোগী ও অত্যন্ত প্রশংসনীয় অঙ্গীকার। প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের বহু পুরনো। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন নগর ও গ্রামের বৈষম্য দূর করবেন। তিনি কৃষি বিপস্নব, গ্রামে বিদু্যতায়ন, কুটিরশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন করে গ্রামাঞ্চলে আমূল পরিবর্তনের কথা বলেন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা গ্রামকে কীভাবে শহরে রূপান্তর করা হবে, তার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘উন্নত রাস্তা-ঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদু্যৎ জ্বালানি সরবরাহ বাড়ানো, কম্পিউটার, দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদু্যতিক সরঞ্জাম ও মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সব সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি’। গ্রামে বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করতে গ্রম্নপভিত্তিক বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ এবং সহায়তা দেয়া হবে। গ্রামপর্যায়ে কৃষিযন্ত্র, সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিটি গ্রামে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া। আমরা সেটি করে যাচ্ছি’।
দেখা গেছে, সরকারের এ পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ বিদু্যৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ২০২০ সালে শতভাগ বিদু্যৎসেবা নিশ্চিত হবে। এখন গ্রামের রাস্তা-ঘাট আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। ১০ টাকায় কৃষকরা ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা পাচ্ছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা এখন বেশ ভালো। সড়ক-মহাসড়কে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বাস, নৌপথ ও আকাশপথে যোগাযোগ তুলনামূলক অনেক বেড়েছে। প্রতিটি গ্রাম ও উপজেলাতে ইন্টারনেট সুবিধাসহ ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে গেছে। ১২ কোটির ওপরে জনগণ এখন মোবাইল ব্যবহার করছে। ভিডিওফোনে ছবি দেখা, তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসায়িক লেনদেন, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিসহ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের উন্নতি হয়েছে। ফলে দেশের জনগণের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাস্তবিকই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এই মহাসড়কের যাত্রাপথকে পঙ্কিলমুক্ত করতে হবে। যাত্রাপথের যাবতীয় আবর্জনাকে পরিষ্কার করে উন্নয়নের গতিকে মসৃণ করতে হবে। এই পথপরিক্রমা কসুমাস্তীর্ণ নয়। এখানে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ও দৃঢ় নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। কোনো অন্যায় বা অসত্যকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। খাদ্যে ভেজাল, মাদক, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ইত্যদি সব ইসু্যতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। একটি জনকল্যাণমূলক আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।