ডেস্ক নিউজ
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশি হাইকমিশনে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রে সত্যায়ন দেয়া শুরু হয়েছে। আজ বুধবার পর্যন্ত ১৫টি কোম্পানীর চাহিদাপত্রে যাচাই বাছাই সম্পন্ন করে সত্যায়ন দিয়েছে হাইকমিশনের লেবার উইং। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র এতথ্য নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল সেন্টারের তালিকা প্রকাশ করলেই চলতি মাসের শেষ দিকে প্রথম ফ্লাইট যোকে কর্মী যাওয়া শুরু হবে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারের তালিকা প্রকাশের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মেডিকেল সেন্টারের তালিকা প্রকাশে অহেতুক বিলম্ব হওয়ায় জনশক্তি রফতানির কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে।
দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু হলে দু’বছরে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। দেশটিতে বর্তমানে লাখ লাখ অভিবাসী কর্মীর চাহিদরা রয়েছে। কর্মী সঙ্কটের দরুণ দেশটির বিভিন্ন সেক্টরে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে বর্তমানের ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। কর্মী প্রেরণ যতদ্রæত শুরু করা যাবে দেশের জন্য ততই লাভজনক। দীর্ঘ দিন শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগের পর গত ১৯ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে উভয় দেশের মাঝে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোত স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতো শ্রী এম সাভারানান এবং বাংলাদেশের প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী কোম্পানীগুলো বাংলাদেশি কর্মীদের যাতায়াতের বিমান ভাড়া বহন করার শর্ত রয়েছে।
অতিসম্প্রতি প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করেছেন জনপ্রতি ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। প্রবাসী মন্ত্রী দ্ব্যর্থকন্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে কেউ অতিরিক্ত টাকা নিলে দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশটির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সজাগ দৃষ্টি রেখেই কর্মী নিয়োয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক টিম বাংলাদেশে সফর করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনপ্রাপ্ত ৩৪টি মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করে কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে এফডবিøউসিএমএস। কিন্ত মেডিকেল সেন্টার তালিকাভুক্তির জন্য বাছাই কমিটি অদ্যাবধি মেডিকেল সেন্টারের তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। কমিটি মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শনের নামে অহেতুক গড়িমসি করছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
মেসার্স নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল (৭০৩) মালয়েশিয়ার রেডউড ফার্ণিচার এসডিএন বিএইচডি কোম্পানীতে ১৫০ কর্মী নিয়োগানুমতি লাভের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিববের দপ্তরে লিখিত আজ আবেদন দাখিল করেছে। গ্রীন ল্যান্ড ওভারসীজ মালয়েশিয়ার আশুকা ইন্ডাষ্ট্রিজ এন্টারপ্রাইজ কোম্পানীতে ১শ’ জন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র লাভ করেছে। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন উল্লেখিত দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সিসহ ১৫টি কোম্পানীতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন করেছে। এসব কোম্পানী কর্মী নিয়োগের যোগ্য রয়েছে কী না তা’ যাচাই বাছাই করেই সত্যায়ন দিচ্ছে। মেসার্স নিউ এজ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শওকত হোসেন সিকদার আজ বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ার শত শত কোম্পানী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। শিগগিরই তার প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানীর আরো এক হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র হাতে পাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গ্লোবাল মেডিকেল সেন্টার মালয়েশিয়ার সরকার কর্মী নিয়োগের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। কিন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল সেন্টারগুলোর তালিকা দ্রুত প্রকাশ করা হলেই চলতি মাসের শেষ দিকে প্রথম ফ্লাইট যোগে কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী, প্রবাসী সচিব, বিএমইটির ডিজি নির্দেশনায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া জনশক্তি রফতানির জন্য মালয়েশিয়া নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ অক্লান্ত পরিশ্রমে মালয়েশিয়া বিভিন্ন শহরে অনেক গুলো কোম্পানী ভিজিট করে কোম্পানী চাহিদাপত্রে সত্যায়ন করছে। এতে করে মালয়েশিয়ার জনশক্তি রফতানির দ্বার উম্মোচিত হতে যাচ্ছে। কর্মী যাওয়া শুরু হলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সরকারের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আজ বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, জনশক্তি রফতানি শুরু হলে প্রধান মন্ত্রীর হাত শক্তিশালী হবে এবং দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তরান্নিত হবে ইনশাআল্লাহ। গত জুন মাসের শেষের দিকে, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এফ ডব্লিউ সি এম এস (অভিবাসী কর্মী নিয়োগের অনলাইন সিস্টেম) এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির নিয়োগকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে অভিবাসী কর্মী নিয়োগের আবেদনপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি হাজরে আসওয়াতের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন আজ বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ার সুপ্রিম উড এন্টারপ্রাইজ গত ২১ ফেব্রুয়ারি এবং স্কাই উড এসডিএন বিএইচডি’ গত ২৪ এপ্রিল তাদের এজেন্সির মাধ্যমে ১৫ জন সাধারণ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র ইস্যু করেছে। মালয়েশিয়ার আরো একাধিক নিয়োগকর্তা সাধারণ কর্মী নেয়ার জন্য একাধিক চাহিদাপত্র ইস্যু করেছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। দেশটিতে অভিবাসী কর্মীর চরম সঙ্কট বিরাজ করছে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর পর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে অভিবাসী কর্মীর অভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির শিল্প কারখানার মালিকরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বিভিন্ন কোম্পানী প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। বাংলাদেশ যে কয়টি দেশে জনশক্তি রফতানি করে তার মধ্যে অন্যতম মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। একসময় দেশটিতে বিভিন্ন কাজ নিয়ে লাখ লাখ কর্মী যেতেন।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কর্মী প্রেরণের পদ্ধতি চূড়ান্ত করায় দেশটির রাজা আগং বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজপ্রাসাদ ইস্তানা নিগারায় রাজা ইয়াং ডি পারতোয়ান আগং এবং রানীর সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এবং তার সহধর্মিনী মিসেস তাসলিমা সারোয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় কালে রাজা এ সন্তোষ প্রকাশ করেন। কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত ১৩ জুন থেকে শুরু হয় এ নিবন্ধন। বিএমইটি জানায়, জেলা কর্মসংস্থান অফিস কিংবা অনলাইনে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে এ নিবন্ধন করা যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার যারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হবেন, মালয়েশিয়া সরকার যদি সেগুলো নির্বাচন করে শুধুমাত্র তারাই মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের মেডিকেল পরীক্ষা করতে পারবেন। কর্মী নিয়োগ শুরু হলে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর বাংলাদেশি কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স-সংক্রান্ত খরচ, মানসম্মত আবাসন, বিমা, চিকিৎসা ও কল্যাণ ইত্যাদি সেখানকার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে।
আজ রাতে বায়রার একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দাতো সেরি হামজা জয়নুদ্দিন আজ বিকেলে দেশটির গণমাধ্যমে মালয়েশিয়ার শিল্প কারখানার উৎপাদনের স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে দ্রুত পাঁচ লাখ কর্মী নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।