ডেস্ক নিউজ
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে একটি কার্যকর মুক্তবাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা। এ জন্য বিদ্যমান আঞ্চলিক চুক্তিগুলোকে কার্যকর করার জন্য ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট) কার্যকর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গতকাল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়ে দিনব্যাপী আলোচনার পর এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান দুই দেশের কর্মকর্তারা। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব অনুপ ওয়াধাওয়ান নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মুক্তবাণিজ্যের সম্ভাবনা নিয়ে উভয়পক্ষ ইতিবাচক ছিল। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাফটা এবং বিমসটেকের মতো আঞ্চলিক চুক্তিগুলোর ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ বলেছে, সাফটার সুফল শুধু বাংলাদেশ ও ভারত নয়, এ অঞ্চলের আরও আটটি দেশ পাবে। বৈঠকের পরিবেশ সম্পর্কে একটি সূত্র জানায়, এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের এটি ছিল প্রথম বৈঠক। এ বৈঠকে বাংলাদেশ অনেক বেশি দৃঢ়তা ও যুক্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ইস্যুগুলো তুলে ধরেছে।
উপস্থিত সূত্র জানায়, সাফটার ব্যাপারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিব বলেছেন, ২০১৫ সালের পর সাফটার কোনো বৈঠক হয়নি। নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার এ মুক্তবাণিজ্য চুক্তিটিকে কার্যকর করতে পারে ভারত। এটিকে এখন কার্যকর করা উচিত। এটি এমন একটি আঞ্চলিক চুক্তি যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ইস্যুগুলো সমাধানযোগ্য এবং বাংলাদেশ সেটি চায় বলে দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্য সচিব। সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশের কিছু পণ্যের ওপর ভারত যে অ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করে রেখেছে, এ বিষয়ে জোর আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য সচিব বলেছেন, দুই দেশের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কের ৫০তম বছরে এসে আমরা ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং’ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছি। যেটি একটি নেগেটিভ শব্দ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আমরা কোনো নেতিবাচক ইস্যু দেখতে চাই না। বাংলাদেশের বাণিজ্য সচিবের এ ধরনের বক্তব্যে ভারতের বাণিজ্য সচিব হেসে ফেলেন এবং অ্যান্টি-ডাম্পিং প্রত্যাহারে তার দেশের সংশ্লিষ্ট দফতরকে জোর সুপারিশ জানাবেন বলে আশ্বাস দেন। দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে ভারতের নতুন কাস্টমস আইন নিয়ে জটিলতার সমাধান, ভোজ্যতেলসহ কিছু পণ্যের ওপর ভারতের আমদানি বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া এবং বিভিন্ন অশুল্ক বাধা নিয়েও কথা বলেছে বাংলাদেশ। অপরদিকে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কম্প্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ চুক্তিতে (সেপা) জোর দিয়েছে। বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের কথা বলেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সব বন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য রপ্তানির সুযোগ চেয়েছে ভারত। দিনব্যাপী বৈঠকে উভয়পক্ষের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে : দুই দেশের সীমান্তবর্তী মানুষের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপনে বর্ডার হাট বাড়ানো হবে; ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে দুটি সীমান্ত হাট উদ্বোধন হবে। এ ছাড়া তামাবিল সীমান্ত দিয়ে কয়লা রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে পরিবেশ দফতরের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছে দেশটি। সেভেন সিস্টার্স বিশেষ করে ত্রিপুরায় পণ্য রপ্তানি বাড়াতে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আরও বেশি ট্রাক প্রবেশের সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত বলেছে, করোনা মহামারীর কারণে এতদিন ট্রাক প্রবেশ সীমিত ছিল। এখন তারা বেশি ট্রাক ঢুকতে দিচ্ছেন। নতুন কাস্টমস আইনের বিষয়ে ভারত বলেছে, তাদের এ আইনটি বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে। তবে এ আইনের কোনো ধারায় যদি বাংলাদেশের সমস্যা হয়, তবে সুনির্দ্দিষ্ট সেই ইস্যু সমাধানে উদ্যোগী হবে ভারত। বৈঠকের কোনো ইস্যু নিয়ে মন্তব্য না করলেও দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন। গতকাল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে টেলিফোনে তিনি বলেন, এবারের বৈঠকে বাণিজ্যিক ইস্যুগুলোর বিষয়ে ভারত অনেক বেশি আন্তরিক ছিল। বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণে অভিনন্দন জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি উত্তরণ পরবর্তী বাংলাদেশের বাণিজ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ৫০তম বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে উভয়পক্ষই সচেষ্ট ছিল বলে জানান বণিজ্য সচিব।