ডেস্ক নিউজ
মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাশিয়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেভেন ফ্লিট পাঠিয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে; তখন রাশিয়া আমাদের পক্ষে দাঁড়াল। কাজেই দুঃসময়ে যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা নিশ্চয়ই তাদের পাশে থাকব। কিন্তু তারা যদি কোনো অন্যায় করে নিশ্চয় সেটা আমরা মানব না। আর আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যুদ্ধটা বাধাল কারা, সেটাও আমাদের দেখতে হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে প্রশ্নকর্তা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন ভোটের বিষয়ে আমরা একবার ভোটদানে বিরত থেকেছি, আবার পক্ষে ভোট দিচ্ছি, এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থানটা কী, তা তিনি জানতে চান।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন একটি দেশের (রাশিয়া) বিরুদ্ধে প্রস্তাব, আমরা তার পক্ষে যাইনি, আমরা ভোট দেইনি। কিন্তু যখন ইউএনজিএ (সাধারণ পরিষদ) এর দ্বিতীয় প্রস্তাবে মানবাধিকারের বিষয়টি উঠে আসে, বাংলাদেশ এর পক্ষে ভোট দিয়েছে। আমার মনে হয় এটা একেবারে স্পষ্ট। এটা নিয়ে আর কারও কোনো দ্বিধা থাকা উচিত নয়। জাতিসংঘের প্রথম প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে একক দেশ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) প্রস্তাব উত্থাপন করায় বাংলাদেশ তাতে ভোট দেয়নি, তবে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ইউক্রেনের মানবাধিকার বিষয়ে হওয়ার কারণে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘে যখন প্রথম প্রস্তাবটি এলো আমরা দেখলাম সেই প্রস্তাবে কোনো মানবাধিকারের কথা নেই। যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা নেই। একটা দেশের বিরুদ্ধে ভোট। সেটা হলো রাশিয়া। তখন আমি বললাম, এখানে তো আমরা ভোট দেব না। কারণ, যুদ্ধ তো একা একা বাধে না। উসকানি তো কেউ না কেউ দিচ্ছে। দিয়ে তো বাধাল যুদ্ধটা। তাহলে একটা দেশকে কনডেম (নিন্দা) করা হবে কেন? সেজন্য আমরা ভোটদানে বিরত ছিলাম। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট দেওয়ার এখন (দ্বিতীয়) যে প্রস্তাবটা এসেছে এই যুদ্ধের ফলে, ইউক্রেনের মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই কষ্ট পাচ্ছে, সেখানে মানবাধিকারের বিষয়টি ছিল। দ্বিতীয় প্রস্তাবে যেহেতু মানবাধিকার বিষয়টি রয়েছে সেজন্য আমরা ভোট দিয়েছি’। র্যাব মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে : মুজিবুল হক চুন্নুর অপর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে সন্ত্রাস দমনে তখনকার বিএনপি সরকার র্যাব সৃষ্টি করেছিল। তবে তারা র্যাবকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর র্যাব জঙ্গি, সন্ত্রাস দমন, হত্যার তদন্তসহ মানবিক কাজই করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, তারা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে। র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে। এদের কাজটি হচ্ছে, বাংলাদেশে যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে তারা ভালো থাকে না। এ জন্য তারা সবসময় তার (সরকারের) বিরুদ্ধে লেগেই থাকে। তারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ওখানকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটরের কাছে তথ্য পাঠানো, চিঠি দেওয়া নানাভাবে তারা এই অপপ্রচার করে। সেখানে আপত্তিটা আমাদের দেশের লোক করেছে। আজকে র্যাবের বিরুদ্ধে যে বদনাম এ জন্য অন্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের দেশের লোক বদনামটা করে। এই র্যাবের বিরুদ্ধে বদনাম তো আমার দেশের মানুষ করে যাচ্ছে। এ জন্য বলার কিছু নেই। আর সেই জন্য এই স্যাংশনটা এসেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ এখানে র্যাবের কোনো সদস্য যখন অন্যায় করেছে, সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। আপনারা জানেন, আমাদের একজন মন্ত্রীর জামাই একটি অপরাধ করেছিল। মন্ত্রীর জামাই হিসেবে কিন্তু আমরা ক্ষমা করিনি। তাকে ঠিকই বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ কোনো সময় অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। সে যেই হোক। আইনশৃঙ্খলা সংস্থার যে কেউ কোনো অপরাধ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। কাজেই এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু থাকে না।
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সারা দেশে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে। নিম্নবিত্তদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়া হচ্ছে। রমজানেও জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে।
ঘরহীন মানুষের ঠিকানা পাওয়া ছিল আনন্দের : জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরবাড়িহীন দুস্থ মানুষ ঠিকানা পেয়েছেন। ঘর পাওয়ার পর এই ঠিকানাহীন মানুষের আনন্দাশ্রু দেখে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে প্রবাসে অসহনীয় জীবন ও পরবর্তীতে দেশে ফিরে প্রতিহিংসার শিকারের অতীত কষ্ঠের কথা সংসদে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সব জেলা সদরে আইসিইউর ১০টি করে বেড থাকবে : জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য দশটি বেড থাকবে। আর দশটি থাকবে আইসিইউয়ের জন্য। এটার নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। আটটি বিভাগীয় হাসপাতালে ক্যান্সার, কিডনি ও হার্টের চিকিৎসা যাতে হয়, তার নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন আমরা লোকবল নিয়োগের ব্যবস্থা করছি।