নিউজ ডেস্ক:
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি মোশতাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারের লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘১৯৭১ ভেতরে বাহিরে’ মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য জাতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। সেই তথ্য সংশোধন করার জন্য লেখক আগ্রহী হলেও তা আটকিয়ে দেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা মঈদুল হাসানসহ কয়েকজন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনে এ কে খন্দকারের স্ত্রী ফরিদা খন্দকার এ কথা জানান।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কে খন্দকার বলেন, ‘আমার লেখা বই ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে ‘প্রথমা প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশনার পর বইটির ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বিশেষ অংশ ও বইয়ের আরো কিছু অংশ নিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদ ওঠে। বইটির ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত বিশেষ অংশটি হলো- ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, ‘জয় পাকিস্তান’।’
তিনি এ তথ্যের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই তথ্যটুকু যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে কখনোই ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বলেননি। আমি তাই আমার বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার উল্লেখিত বিশেষ অংশ সম্বলিত পুরো অনুচ্ছেদটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একইসাথে আমি জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা মঈদুল হাসানের ধৃষ্টতা সম্পর্কে এ কে খন্দকারের স্ত্রী ফরিদা খন্দকার বলেন, আমরা এই তথ্য সংশোধন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে সংশোধন করতে দেওয়া হয় নাই। আমি মতিউর রহমানকেও জিজ্ঞেস করেছিলাম- ভাই আপনি কি এটা পড়ে দেখেননি? তিনি বলেন, এটা আমি পড়ি না, আমাদের লোক থাকে। তারা বানান ভুল এসব দেখে। তারা এগুলো খেয়াল করে নাই। আমি চেষ্টা করেছিলাম যে সংশোধনীটা হয়ে যাক। কিন্তু আমাদেরকে সেটা করতে দেয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের একের পর এক প্রশ্নে কিছুটা বিচলিত হন ফরিদা খন্দকার। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করতে দেয়নি তাদের মধ্যে কি কাজী জাফরুল্লাহ ছিলেন? উত্তরে ফরিদা বলেন, ‘জ্বি, ছিলেন। তার সঙ্গে আমার আগে কোনো পরিচয় হয়নি। ওনাকেসহ কয়েকজনকে আরেকজন নিয়ে এসেছিল।’
এসময়ে ফরিদা খন্দকার নামগুলো প্রকাশের জন্য পাশে বসা এ কে খন্দকারের অনুমতি চান। এ কে খন্দকার বলেন, ‘বলে দাও’। এ পর্যায়ে ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘মঈদুল হাসান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাজউদ্দীন সাহেবের প্রেস সেক্রেটারি বা পিএস জাতীয় কিছু। মঈদুল হাসান এরপরে কাজী জাফরুল্লাহ…। কাজী জাফরুল্লাহকে আমি চিনতাম না, মঈদুল হাসানকে চিনতাম। এরপরে আরেকজন ওবায়েদ। আরো কে কে যেন ছিলো। আমি নাম মনে করতে পারছি না। তারা কয়েকদিন ধরে আমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল যেন এটা…। আমাদের বলা হলো ‘গুলি ছুড়ে দিয়েছো’ এখন কি গুলির পেছনে দৌড়ব?’
ফরিদা খন্দকার তার বক্তব্যে বার বার ভুলবশত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম কাজী জাফরউল্যাহ বলতে থাকেন। পরে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তার ভুল সংশোধন করেন।
ফরিদা খন্দকার তার স্বামী এ কে খন্দকারের প্রসঙ্গে বলেন, ‘বইটা সংশোধন না করাতে উনি কিন্তু মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়েছেন একেবারে উন্মাদ পাগল হিসেবে। এখনো তার চিকিৎসা চলছে।’