ডেস্ক নিউজ
মুজিববর্ষে জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা গ্রহণে কষ্ট লাঘবে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সম্মানি ভাতা পেতে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাতে সামান্যটুকু কষ্ট করতে না হয়, কোথাও যেতে কিংবা ধর্ণা দিতে না হয়- সেজন্য এখন থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ‘গবর্নমেন্ট টু পার্সন (জি ২ পি)’ মাধ্যমে সরাসরি তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে সম্মানি ভাতা পৌঁছে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার গণভবন থেকে ভাতাপ্রাপ্ত সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সরাসরি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। একাধিক ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এ সংবাদে মুজিববর্ষে এটা তাদের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আরেকটা বড় উপহার হিসেবেই দেখছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধা/উপকারভোগীর অনুকূলে জানুয়ারি মাসের সম্মানি ভাতা সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে চলে যাবে।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ সোমবার পাঁচটি উপজেলায় সরাসরি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রায় দেড় হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জি২পি পদ্ধতিতে সরাসরি তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে সম্মানি ভাতা পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। আর এই উদ্বোধনের পর থেকে ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর মন্ত্রণালয়ে হয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হয়ে সমাজকল্যাণের মাধ্যমে ভাতা উত্তোলন করার সামান্যতম বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) প্রস্তুত করা হয়েছে, সেখানে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্য ইতোমধ্যে সন্নিবেশ করা হয়েছে। অবশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্য সংযোজনের কাজও চলমান রয়েছে, যা অচিরেই সম্পন্ন করা হবে। উক্ত এমআইএস ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সকল জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশদের পরিচিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
উক্ত এমআইএস ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একজন মুক্তিযোদ্ধার সকল ধরনের প্রমাণকের তথ্য, ব্যাংক হিসাব নম্বর এবং মোবাইল নম্বর সংযোজন করা হয়েছে। সারাদেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এবং মহানগরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এমআইএস এ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি সংযোজন করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এটুআই আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ তথ্য ভান্ডারটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সারাদেশে এক লাখ ৯২ হাজার ৫৩২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রচলিত পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জনপ্রতি ১২ হাজার টাকা হারে সম্মানি ভাতা প্রদান করে হয়ে থাকে। এছাড়া শহীদ, যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত মোট ১২ হাজার ৬৭৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রেণীভেদে ১৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক সম্মানি হিসেবে প্রদান করা হয়।
সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে জেলা ও উপজেলা জেলা প্রশাসনের সহায়তা উপকারভোগীর অনুকূলে বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে শহীদ, যুদ্ধাহত ও বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এবং বিভিন্ন বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংশ্লিষ্ট বাহিনীর মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে প্রদান করা হয়। সর্বমোট ভাতাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ২০৬ জন।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এমআইএস-এ এন্ট্রিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সুবিধাভোগীর ব্যাংক হিসাব এবং মোবাইল নম্বর সন্নিবেশের মাধ্যমে ইলেকট্টনিক গবর্নমেন্ট টু পার্সন (জি২পি) প্রক্রিয়ায় প্রতিমাসে সম্মানী ভাতা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি ভাতাভোগীর ব্যাংক হিসাবে জমা করার মাধ্যমে নাগরিক সেবা ডিজিটাল উপায়ে প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা গেছে, এর ফলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যানুপাতে সম্মানি ভাতা বাবদ অর্থ জেলা প্রশাসক হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হবে না। এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহজে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা জি২পি প্রক্রিয়ায় সরাসরি তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে প্রেরণের কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধা/ উপকারভোগীর অনুকূলে জানুয়ারি মাসের সম্মানি ভাতা বাবদ ১৮২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি ভোতাভোগীর ব্যাংক হিসাবে প্রদান করা হবে। পর্যায়ক্রমে সকল মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা ইলেকট্টনিক প্রক্রিয়ায় প্রদান করা হবে।