ডেস্ক নিউজ
দেশজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। পারদ নিম্নগামী। শীতে জবুথবু মানুষ। এরই মাঝে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে রাজনৈতিক উত্তাপ ঊর্ধ্বমুখী। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের বাড়াবাড়ি রকমের লম্ফঝম্প উত্তাপের পারদকে চড়িয়েছে কয়েকগুণ। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত তো কোনও কোনও মেয়র প্রার্থীর বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছেন একাধিকবার। মার্কিন দূতাবাসের নেতৃত্বে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশ এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। খবর বেরিয়েছে, এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তারা ভারত ও চীনকেও যুক্ত করতে চেয়েছিল। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যেন ভারত ও চীনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হয়, সেজন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি চীন ও ভারত। ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। কোনও দেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার কোনও নজির ভারতের নেই। এজন্য ভারত আসন্ন সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চায় না।
অন্যদিকে, চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। কূটনীতিকদের অতি তৎপরতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বেশ কিছু বিদেশি কূটনীতিক ব্রিটিশ হাইকমিশনে মিলিত হয়েছিলেন। তারা নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে নাক গলাচ্ছেন, যা একবারেই উচিত নয়। কূটনীতিকরা কোড অব কন্ডাক্ট মেনে কাজ করবেন বলে আশা করি। তবে যারা কোড অব কন্ডাক্ট মানবেন না তাদের বলবো দেশ থেকে চলে যান। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষোভ ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়েরের মধ্যে ভোট নিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ঢাকায় কর্মরত পশ্চিমা দেশগুলোর দূতরা। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকায় অবস্থিত কূটনীতিক ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত পর্যবেক্ষক হিসেবে আমরা এই শহরের ভোট কেন্দ্রসমূহে গণতন্ত্রকে কার্যকর অবস্থায় দেখার প্রত্যাশা করছি। আমরা আরও আশা করছি, বাংলাদেশের সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সব সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকারকে সম্মান জানাবেন এবং স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে ভোট গণনা করবেন।’ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও সুইজারল্যান্ডের কূটনীতিকরা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের তৎপরতা থাকলেও স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তাদের এত দৌড়ঝাঁপ অতীতে দেখা যায়নি। কোনও স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের নির্বাচনে প্রার্থীদের বাসায় বিদেশি কূটনীতিকদের যাওয়া, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার মতো কাজে জড়িয়ে পড়া তাদের কর্মকাণ্ডের পরিধির মধ্যে পড়ে কী? কূটনীতিকদের কার্যপরিধি, দায়-দায়িত্ব, সুযোগ-সুবিধা ও দায়মুক্তি সংক্রান্ত মূল আন্তর্জাতিক আইন হলো ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন (চুক্তি)। এছাড়া কিছু আনুষঙ্গিক আইন রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কূটনীতিকদের কাজ হলো–এক. গ্রহীতা রাষ্ট্রে প্রেরক রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা; দুই. আইন মোতাবেক গ্রহীতা রাষ্ট্রে প্রেরক রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করা; তিন. গ্রহীতা রাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা; চার. গ্রহীতা রাষ্ট্রে বিদ্যমান যেকোনও অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা নিজ রাষ্ট্রের সরকারকে অবহিত করা; এবং পাঁচ. প্রেরক রাষ্ট্র ও গ্রহীতা রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করা ও তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সম্পর্কের প্রসার ঘটানো।
আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রদূতদের কোনোভাবেই কোনও রাষ্ট্রের নির্বাচন-রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য রাখার কিংবা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ, বিবৃতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় তথা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ। ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন কূটনীতিকদের আচরণ ও নিষিদ্ধ কার্যাবলির তালিকার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ আইন নয়। কালের পরিক্রমায় কূটনৈতিক রীতি-প্রথা ও নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনীতিকদের জন্য প্রযোজ্য আচরণবিধি গড়ে উঠেছে। এসব আচরণবিধি বিধিবদ্ধ করা না হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯১৭ সালে Sir Ernest Satow-এর লেখা বই A Guide to Diplomatic Practice এবং ২০১৬ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক Paul Behrens-এর Diplomatic Interference and the Law গ্রন্থটি প্রণিধানযোগ্য। এ গবেষণামূলক বই দুটিতে গ্রহীতা রাষ্ট্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ, গ্রহীতা রাষ্ট্রের সরকার, এমনকি গ্রহীতা রাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রের সমালোচনা, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের সীমাবদ্ধতার বিষয় বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। Paul Behrens তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পোলিশ রাষ্ট্রদূত জার্মানির সমালোচনা করে বক্তব্য দিলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখিত পত্র দিয়ে পোলিশ রাষ্ট্রদূতকে হুঁশিয়ার করেন যে, মার্কিন বন্ধুরাষ্ট্রকে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া কূটনীতিকের কাজের আওতাভুক্ত নয়। ১৯৮৪ সালে ফ্রান্সে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত Evan Galbraith কমিউনিস্টপন্থীদের ফরাসি সরকারে যোগ দেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, সবাই জানে কমিউনিস্টরা সোভিয়েত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। Evan Galbraith-এর বক্তব্যের পর ফরাসি প্রধানমন্ত্রী Pierre Mauroy তাকে ডেকে পাঠান এবং তার বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য বলে হুঁশিয়ার করে দেন। ২০০০ সালে ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত Robert Gelbard ইন্দোনেশিয়ার সরকারকে দেশটির সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে Agus Wirahadikusumah-কে নিয়োগ দেওয়ার চাপ দিলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী Mahfful তাকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে প্রতিহত করেন। ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিদেশমন্ত্রী Mumbengegwi একদল পশ্চিমা কূটনীতিককে ডেকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী জিম্বাবুয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ। ফিজিতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রীনিবাসন দেশটিতে অবস্থিত ভারতীয় মন্দিরে আগুনবোমা নিক্ষেপের প্রতিবাদে ও সমস্যার সমাধানকল্পে ফিজির সংবিধানে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকারমূলক বিধান সংযোজনের প্রকাশ্য বিবৃতি দেওয়ার পর তাকে ফিজি থেকে বহিষ্কার করা হয়। নেপালে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রাকেশ সুদ নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রর সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে প্রতিবাদকারীদের ‘তথাকথিত পানি বিশেষজ্ঞ’ এবং প্রতিবাদকে ‘ভারত ফোবিয়া’ আখ্যায়িত করলে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, হাইকমিশনারের বক্তব্য ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিচ্যুতি’।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই কূটনীতিকের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ঘুম হারাম। অথচ খবর বেরিয়েছে, এ দুই দেশের গণতন্ত্রের প্রতি সে দেশের মানুষের অসন্তুষ্টির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব দ্য ফিউচার অব ডেমোক্র্যাসির গবেষকেরা বিশ্বের ১৫৪টি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মানুষের কাছে তাদের প্রশ্ন ছিল, নিজ দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আপনারা সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট? গবেষকেরা বলছেন, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের মনোভাব জানার ক্ষেত্রে ৪০ লাখ লোকের ওপর জরিপ চালানো হয়। জরিপে সবচেয়ে বেশি বা উচ্চমাত্রায় অসন্তুষ্টি পরিলক্ষিত হয় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্যে ২০০৫ সাল থেকে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টি ঊর্ধ্বমুখী। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্র নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল ৪৭ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্টির মাত্রা পৌঁছেছে ৬১ শতাংশে। বৈশ্বিক প্রবণতা, আর্থিক সংকট ও দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যদের অর্থ ব্যয় নিয়ে বিতর্কিত ঘটনার কারণেই গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রেও গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশটিতে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের সন্তুষ্টির মাত্রা ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ। এরপরই তা কমতে শুরু করে। বর্তমানে সেটি ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গবেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, রাজনৈতিক মেরুকরণসহ বিভিন্ন কারণে গণতন্ত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট হচ্ছে মার্কিনরা। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের নিজেদের দেশের গণতান্ত্রিক সংকট নিয়ে মাথাব্যথা নেই। অথচ বাংলাদেশ দরদি এই দুই কূটনীতিকের বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা-উদ্বেগে মুখে খাবার রুচে না।
কূটনীতিক শিষ্টাচার ও কর্মপরিধি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনে নাকগলানোর অধিকার কে দিলো? উত্তরটা সহজ। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি প্রায়ই রসিকতা করে বলে থাকেন, ‘গরিবের বউ সকলের বাউজ (ভাবি)’। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র হওয়ায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র দাতা ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। আর তাই লাখো শহীদ ও কন্যা-জায়া-জননীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপকেও আমরা কোনও না কোনোভাবে মেনে নিই। আমাদের যেমন অনেক সময় নির্বাচিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ কমিশনারের কাছ থেকেও চরিত্রের সনদ নিতে হয়, তেমনি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে নিজ দেশের মানুষের মধ্যে যতই অসন্তুষ্টি থাকুক না কেন এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রের সার্টিফিকেট বিতরণের প্রধান বৈশ্বিক ডিস্ট্রিবিউটর এই দুই দেশই।
উল্লেখ্য, ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক বিলোপ সাধনের পর ধনী রাষ্ট্র ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলে নির্মম শোষণমূলক বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আংকটাডের হিসাব অনুযায়ী, অন্যায্য বৈশ্বিক বাণিজ্যের কারণে দরিদ্র দেশগুলো প্রতিদিন ১৩০ কোটি পাউন্ড হারাচ্ছে, যা ধনী দেশগুলো থেকে প্রাপ্ত সাহায্যের ১৪ গুণ। জাতিসংঘের হিসাব আরও বলছে, ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশের মোট জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ অথচ বৈশ্বিক বাণিজ্যে এসব রাষ্ট্রের সম্মিলিত অংশ মাত্র ০ দশমিক ৪ শতাংশ। লন্ডনভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো প্রতিবছর ৫০০-৫৫০ কোটি ডলারের সাহায্যপ্রাপ্তির বিপরীতে ২০ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থঋণ পরিশোধ ও শোষণমূলক বাণিজ্য, বাণিজ্য উদারীকরণ, ধনী রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে শিল্পের কাঁচামাল বিক্রিতে বাধ্য হওয়া, শর্তযুক্ত ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কারণে পরিশোধ করে থাকে। ২০০ তৃণমূল এনজিওর কোয়ালিশনের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য দেওয়ার সময় এমনভাবে শর্ত আরোপ করে যে সাহায্যের প্রতি ডলারের ৮০ সেন্ট অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত যাবে। এক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি এক ডলার ঋণ গ্রহণের বিনিময়ে দরিদ্র রাষ্ট্রকে ১৩ ডলার পরিশোধ করতে হয়।
প্রসঙ্গত, দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর ঋণ গ্রহণের আগেই ঔপনিবেশিক প্রভুরা উপনিবেশে ছেড়ে যাওয়ার আগে অন্যায় ও অন্যায্যভাবে তাদের মেট্রোপলিটন রাষ্ট্রের নামে গৃহীত ঋণ উপনিবেশের ওপর চাপিয়ে দিয়ে যায়।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের অতি-উৎসাহী আচরণ অস্বাভাবিক প্রতীয়মান হচ্ছে। ওপরে সুশীল ভিতরে কুটিল, আমাদের এমন কিছু সুশীলের সুপার-ডুপার আন্তর্জাতিক কানেকশন রয়েছে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের আড়ালে কোনও ষড়যন্ত্র আছে কিনা, তা বিচক্ষণতার সঙ্গে সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। ফরাসি সম্রাট একাদশ লুইয়ের শাসনামলে এক জ্যোতিষী কর্তৃক সম্রাটের এক প্রিয়তমার মৃত্যুবিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেলে সম্রাট ক্রোধে অন্ধ হয়ে জ্যোতিষীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে রাজদরবারে ডেকে পাঠান। জ্যোতিষী উপস্থিত হলে সম্রাট তাকে বললেন, ‘তুমি তো অন্যের ভাগ্য গণনা করো। এবার বলো দেখি তোমার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে?’ জ্যোতিষী সম্রাটের পরিকল্পনার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বিচক্ষণতার সঙ্গে জবাব দিলো, ‘আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, আপনার মৃত্যুর তিনদিন আগে আমি মারা যাব।’ অতঃপর সম্রাট নিজের জীবন বাঁচাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে জ্যোতিষীর জীবন রক্ষার দায়িত্ব নিলেন। সরকারকেও সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে যেন ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। মেগা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়।