ডেস্ক নিউজ
বর্তমান সরকারের আমলে দেশে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে গত এক দশকে। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশ্বে রোল মডেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন ‘ভিশন ২০৪১’। ওই বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চান তিনি। তারপর আছে শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান। বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পায়রা ও মাতাবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু
পদ্মা বহুমুখী সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা। এই সেতু বাংলাদেশের গৌরব এবং সক্ষমতার প্রতীক। নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। পদ্মা সেতু উন্নয়নের সূচকে যোগ করবে নবমাত্রা। ইতোমধ্যে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর নির্মাণ কাজ ৯১ ভাগ শেষ হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট পদ্মা সেতুতে সড়ক পথের শেষ স্ল্যাবটি বসানোর মধ্য দিয়ে আরেকটি মাইল ফলক স্পর্শ করে বাঙালির বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘স্বপ্নের পদ্মাসেতু’।
পদ্মা বহুমুখী সেতু। ছবি: সংগৃহীত
গত ২০ জুন শেষ হয় সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শেষ স্প্যান বসানো হয়। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দুই তলা বিশিষ্ট সেতুর ওপরে চারলেনে চলবে যানবাহন এবং নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের জিডিপি শতকরা ১.২৬ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে সমগ্র দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল
দেশে প্রথমবারের মতো উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের প্রায় ৭৮ ভাগ শেষ হয়েছে। প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে এবং প্রায় চার কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে।
মেট্রোরেল। ছবি: সংগৃহীত
এর আগে, উত্তরা ডিপো থেকে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চালানো হয়েছিল। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহযোগিতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এ রুটে ১৬টি স্টেশন থাকবে। মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহনের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি যানজট কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম টানেল নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জি-টু-জি ভিত্তিতে টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ছবি: সংগৃহীত
এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। টানেলের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। দু’টি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। ব্যস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলকে ঘিরে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ অক্টোবর মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের খুলে দেওয়া হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লি উদ্বোধন
দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে আরেক চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। যা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান। শেখ হাসিনা সরকার এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিশ্বে পদার্পণ করে এবং বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: ইত্তেফাক
রাশিয়ার প্রযুক্তি ও সহযোগিতায় এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা চুল্লি উদ্বোধন করেন।
ঢাকা নগর পরিবহন চালু
ব্যস্ততম নগরী রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে চালু হলো ঢাকা নগর পরিবহন। ২৬ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
ঢাকা নগর পরিবহন। ছবি: সংগৃহীত
বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের প্রথম ধাপে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমটার পথে চলবে বাস। এই বাসে ভাড়া হবে প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ১৫ পয়সা। মোট ১০০টি বাস দিয়ে পরিচালিত হবে এই কার্যক্রম।