ডেস্ক নিউজ
বাবার হৃদয় বিদা’রক স্ট্যাটাস- মেয়ের মৃ’ত্যুতে বাবা আহমেদ রাশিদ জয় ফেসবুকে গত ২৬শে ডিসেম্বর একটি স্ট্যাটাস দেন। আর সেটি মুহুর্তেই ভাই’রাল হয়। স্ট্যাটাসের মেয়ের আ’ত্মহ’ত্যার কারণ তুলে ধরেন।
স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হল-
আমাদের মেয়ে ঐশী আল্লাহ্র কাছে চলে যায় ১১ই নভেম্বর। প্রথম কয়েকদিন কোন হুঁশ ছিল না। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না মেয়েটি কেন এভাবে চ’লে গেল। ওর স্কুলের ভিপি আমাকে লিখেছে, “I cannot tell you how shocked and saddened I am, in fact the whole school is, on hearing of the very tragic demise of the lovely girl, who was so friendly and full of life.” কি ভুল করলাম আমরা? মেয়েকে কি ঠিকমত আদর করি নাই? কোন কষ্ট দিয়েছি? স্কুলে কেউ খুব কষ্ট দিয়েছে? পরিক্ষার চাপ? সাইকিয়াট্রিস্ট ট্রিট্মেন্ট চলছিল, ডিপ্রেশনের হাই ডোজ ঔষধ আর ১২টা কাউনসেলিং সেশন চলেছে তারপরেও আ’ত্মহ’ত্যা করলো!! ওর সাইকিয়াট্রিস্টও ঐদিন আমার এক কলিগকে ফোনে বলেছে, “বুঝলাম না, এন্টি সুই’সাই’ডাল ঔষধ খাচ্ছিল তারপরেও এটা করলো!!!” আমরা কিছুই মিলাতে পারছিলাম না।
ঐশী চলে যাবার পর দিন থেকে আমাদের হারেস মামা বারবার বলছিল, “এন্টি ডি’প্রেশ’ন মেডিসিন তো সু’ইসাই’ডাল টেনডেন্সি বাড়ায়, বিশেষ করে Prozac । তোদেরকে ডাক্তার কিছু বলে নাই?” পরে Prozac নিয়ে কিছুটা পড়লাম, দেশে বিদেশে অনেক ডাক্তারেরে সাথে কথা বললাম, ঔষধের রেগুলেশন আর লিফলেট পড়লাম। ঐশীর সাই’কিয়া’ট্রিস্ট এর সাথেও আলাপ করলাম। তারপর ব্যাপারটা যখন বুঝলাম, ততক্ষনে পৃথিবীর কঠিনতম ভার আর ক’ষ্ট আমাদের জেঁকে বসেছে।
আমি বিষয়টি এখানে শে’য়ার করছি কারন আমি চাই না আর কোন বাবা মা’র কপালে সারা জীবনের দুর্বিসহ ক’ষ্ট আসুক। সবাই মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। আর কেউ যেন ভুল না করেন। যে ভুলের মূল্য স্রেফ কয়েকটা জীব’নের মূল্যের সমান। আমার জী’বন দিয়েও এই ভূল শুধরাতে পারবো না ।
আগস্ট মাসের ২০ তারিখের দিকে ঐষী ওর মাকে বলছিল, মা আমি পড়তে চাচ্ছি কিন্তু কিছুতেই মন লাগাতে পারছি না। যা পড়ি ভুলে যাচ্ছি। ঐশী কেঁ’দেছিল সেদিন। ওর মা আমার সাথে আলাপ করে সাই’কিয়া’ট্রিস্ট কাউন্সেলিং নিয়ে যাবে কিনা। আমি বলি নিয়ে যাও।
২৪শে আগস্ট ঐশীকে আমাদের বাবার বয়েসি এক সাই’কিয়া’ট্রিস্ট এর কাছে নেয়া হল। বললাম সব। সেই সাই’কিয়া’ট্রিস্ট এবং তার এসিস্ট্যন্ট, অল্প বয়সী এক মেয়ে ডাক্তার প্রেস্ক্রিপশনে ঐশীর ব্যাপারে লিখলেন,
“Procrastination, not focusing on anything, attention down, Memory problem.”
উনারা ঐশিকে প্রথম দিন থেকেই Prozac-20mg (anti depression) দিনে ২টা করে, Cavinton-(brain booster) ৩টা করে, Mirtaz (ঘু’মের) ১টা করে ঔ’ষধ দেয়। পরে Ritalin (Mood enhancer) দেয়।
এগুলো চলে সেপ্টেম্বরের ১২ পর্যন্ত। সাথে চলে উনাদের কাছে ৩ দফা কাউন’সেলিং । আমাদের ১৭ বছরের ঐশী, যে জীবনেও হাত বা তার আঙ্গুল কা’টে নাই, সেই মেয়ে সেপ্টঃ ১২ তারিখে একরকম হাসতে হাসতে প্রথম সুই’সাই’ডের চেষ্টা করে অনেকগুলো স্লি’পিং পি’ল খেয়ে। সাথে সাথে এপোলো হাসপাতালের এমা’র্জেন্সিতে নিয়ে গিয়ে ওকে বাঁ’চানো হয় আর ওর সাই’কিয়া’ট্রিস্টকে ফোনে জানানো হয়। তারা বললেন, সু’স্থ হলে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন।
সেপ্টেম্বরে ১৬ তারিখে ঐশীকে আবার নিয়ে গেলাম। সাই’কিয়া’ট্রিস্ট সব ঔষ’ধের ডো’জ বাড়িয়ে দিলেন। Prozac করা হল ৩টা (৬০ মিঃগ্রাঃ), যোগ করলেন Luraprex 40 mg ২টা (bipolar disorder and schizophrenia), সাথে Cavinton ৬টা, Mirtaz ১টা, ঈন্ডেভার ৩টা আর Ritalin-২টা।
ঐশীর মা প্রায়ই টেলিফোনে ঐ মেয়ে এসিস্ট্যান্ট ডাক্তারকে বলত”, ওকে এখনো ৩টা করে প্রোজ্যাক দিচ্ছেন, ওরতো ডি’প্রেশন লাগে না।“ জবাব দিল, “না আছে। আমরা চেহারা দেখে বুঝতে পারি।“ এভাবে আড়াই মাস মোট ১২ দফা কাউন’সেলিং আর এই সমস্ত হাই ডোজের ঔষধ চলার পর, নভেম্বর এর ১১ তারিখে আমার ‘lovely girl, friendly and full of life’ ঐশী মা স্কুল থেকে ফিরে এসে নিজেই আল্লাহ্র কাছে চলে যায়। যাওয়ার ১ ঘন্টা আগে আমাকে WhatsApp করে, “can you bring cherry from unimart today? Or tomorrow”
কিছুদিন পর থেকে Prozac নিয়ে পড়া শুরু করলাম। আমেরিকার FDA, Prozac এর ব্যাপারে WAR NING: SUI’CIDA’LITY AND ANTI’DEPR’ESSANT DR’UGS: Increased ri’sk of sui’cidal thinking and beha’vior in children, adolescents, and young ad’ults taking anti’depre’ssants। Anyone con’sidering the use of PROZAC or any other anti’depre’ssant in a child, adolescent, or young ad’ult must balance this ri’sk with the clini’cal need.
এটাকে ব্ল্যাক বক্স WAR’NING বলা হয়। এছাড়াও Luraprex ঔষধের লিফলেটে বলা আছে, Pre’cautions: It can cause increase sui’cidal thoughts and beha’viors in adolescents and young ad’ults.
অর্থাৎ সুই’সা’ইড war’ning লাগানো দুইটা ঔষধ , Prozac (60mg) আর Luraprex (80 mg) হাই ডোজ চলেছে দুই মাসের উপরে। উনারা আমাদের এইসমস্ত ওয়া’র্নিং নিয়ে কিছুই বলেন নি।
ঐশী চলে যাওয়ার কয়েকদিন পরে পরিবারের কয়েকজন গেলাম সেই সাই’কিয়া’ট্রিস্ট আর তার সহকারী মহিলা ডাক্তারের কাছে। কথোপকথন ছিল এরকম (সংক্ষিপ্ত);
স্যার, ঐশীকে আমরা এখানে নিয়ে আসলাম ও পড়তে পারছিল না। আপনি ওকে ANTI’DEPRE’SSANT DR’UGS দিলেন কেন?
– আসলে ওর যে এটেন’শন কম, ফোকাস কম, এগুলাই ডিপ্রে’শনের লক্ষন।
ঠিক আছে স্যার কিন্তু প্রোজ্যাক যে দিলেন স্যার, সেটা আগস্ট মাস থেকে খাওয়ার পর সেপ্টেম্বরে ও প্রথম সুই’সা’ইড এটেম্পট করলো আর প্রোজ্যাক এর ব্যাপারেতো ব্ল্যাক বক্স ওয়া’র্নিং দেয়া ছিল যে বাচ্চারা এই ঔষধ খেলে তাদের সুই’সাই’ডাল চিন্তা বাড়ায়। এ ব্যাপারে আমাদের তো কিছুই বলেননি। তারুপর ওর প্রথম এটেম্পট এর পর আপনি দিলেন ডো’জ বাড়িয়ে। সাথে লুরাপ্রেক্স ও দিলেন!!
– আসলে প্রজ্যাক খুব ভালো ঔষধ, বেস্ট ANT’IDEPRE’SSANT DR’UGS ওয়ার্ল্ডের। ম্যাক্সিমাম পারমিসেবল ডো’জ দিয়েছিলাম ৬০ মিগ্রা। কিন্তু পারলাম না। ৪১ বছরের মধ্যে আমার প্রথম রু’গী এভাবে চলে গেল। Extremely sorry, আমি আসলে এই ব্ল্যাক বক্স ওয়ার্নিং এর ব্যাপারে জানতাম না!!!!!
আর আপনি যে বলেছিলেন, ঐশীর এন্টি সু’ইসাই’ডাল ঔষধ চলছিল সেটা কোনটা?
– প্রোজ্যাকই তো এন্টি সুই’সাই’ডাল। এটা সবাই জানে।
মানে? যেটার ব্যাপারে সুই’সাই’ডাল ওয়া’র্নিং দেয়া আছে সেটা এন্টি সুই’সাই’ডাল?
ওনার কোন জবাব নেই। ডাক্তার সাহেব এক পর্যায়ে আমাদের বোঝানের চেষ্টা করেন যে ডিপ্রে’শনে থেকেই মানুষ সুই’সাই’ড করে। যদি তাই হয় তাহলে তো আড়াই মাস ধরে পৃথিবীর বেস্ট এন্টি ডিপ্রে’সেন্ট ঔষধের ম্যাক্সিমাম ডো’জ চলার পর ঐশীর তো খুব ভালো মেজাজে থাকার কথা।
এরপর আসলে আর কোন কথা থাকে না। কিছুক্ষন পরে আমরা কাঁ’দতে কাঁ’দতে ডাক্তারের ওখান থেকে চলে আসলাম। আসার সময় চিৎকার করে বললাম, কিছুই পড়েন না, কোন খোজ খবর রাখেন না। পারবেন আমার মেয়েকে ফেরত দিতে?
দুইদিন পরে আমি গুলশানে ঔষধের দোকানে গিয়ে প্রোজ্যাক এর লিফলেট নিয়ে আসলাম দেখার জন্য সেখানে আসলে কি লেখা আছে। এগুলো লেখা।
Prozac is not for use In children and adolescents under 18.
WAR’NING & PRE’CAU’TIONS: Thoughts of sui’cide and worsening of your depre’ssion or anxiety disorder. Patients under 18 have an increased r’isk of side effects such as sui’cide attempt, sui’cidal thoughts and hostility (predominantly aggression, oppositional behaviour and anger) when they take this class of medicines. Information from clinical trials has shown an increased ri’sk of sui’cidal behaviour in ad’ults aged less than 25 years with psychiatric conditions who were treated with an antidepressant.
Use in children and adolescents aged 8 to 18 years with depression:
Treatment should be started and be supervised by a specialist. The starting dose is 10 mg/day. After 1 to 2 weeks, your doctor may increase the dose to 20 mg/day. The dose should be increased care’fully to ensure that you receive the lowest effective dose.
ঐশীর প্রোজ্যাক এর ডোজ শুরু করে প্রথম দিন থেকেই তাও আবার ৪০ মিগ্রা। পরে বাড়িয়ে করে ৬০ মিগ্রা। কোথায় পেলেন ডাক্তার সাহেব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ম্যাক্সিমাম পারমিসেবল ডোজ ৬০ মিগ্রা? ঔষধ কোম্পানি বলছে সর্বোচ্চ ২০ মিঃগ্রা।
অর্থাৎ ডাক্তার সাহেব আর তার এসিস্ট্যান্ট যেই ঔষধ প্রতিনিয়ত শত শত রু’গীদের দেন তার লিফলেট পড়েন না? এটাকি সম্ভব? আমার স্রেফ মনে হল হাতুড়ে দুই ডাক্তার শিক্ষিতের বেশে ঢাকায় বসে চিকিৎসা দিচ্ছে আর কারিকারি হা’রাম টাকা কামাচ্ছে।
আর আমিও আমার মেয়ে চলে যাওয়ার পর সব পড়ে ফেললাম!! যখন ঔষধ চলছিল কিছুই পড়ি নাই। শুধু ডাক্তারের উপর বিশ্বাস করেছিলাম। আমার এই ভুলের এত চড়া মূল্য দিতে হবে কখনো কল্পনাও করিনি।
পরে আমরা এই প্রেসক্রিপশন দেশে বিদেশে অনেক ডাক্তারকে দেখিয়েছি। বিদেশে সাই’কিয়া’ট্রিস্ককে দেখিয়েছি। তাদের অনেকেই বলেছেন এটা আসলে medicine induced sui’cide. কেউ অবাক হয়েছেন বাচ্চাকে কিভাবে প্রোজ্যাক দেয়!! কেউ ডো’জ নিয়ে বলেছেন- দিনে ৩টা করে প্রজ্যাক কিভাবে দিল? কোরিয়ান এক ডাক্তার আমার বন্ধুকে বলেছে, একটা ছোট বাচ্চাকে এক বয়স্ক বদ্ধ পাগ’লের ঔষধ দিয়েছে!! লন্ডন থেকে এক ডাক্তার বলেছে এটা জাস্ট পলি মেডিসিন ম্যাল্প্র্যাক্টিস।
মেয়েটা আড়াই মাস ধরে বয়স্ক বদ্ধ পাগ’লের হাই ডো’জের ঔষধ খেয়ে না জানি কতটা কষ্ট পেয়েছে। কিছু বলেনিও তার বাবা মাকে। এভাবে মেয়েটি চলে গেল না ফেরার দেশে। সন্তানহারা আমরা এখন শুধু দোয়া চাই ওর জন্য, আর চাই যেন আর কোন বাচ্চার ঐশীর মত অবস্থা না হয়। এতেই মনে হয় ঐশীর আত্মা খুশি হবে।
আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, কোন বাচ্চাকে ANTI’DEPR’ESSANT DR’UGS শুরু করার আগে ডাক্তারকে জিগ্যেস করবেন, এই ঔষধ কেন দিচ্ছেন? এটা না খেলে কি হবে? খেলে কি সা’ইড এ’ফেক্ট হবে? কতদিন খাবে? আর অবশ্যই অবশ্যই ঔষধের লিফলেট পড়বেন। এই ভুল আর কেউ করবেন না প্লিজ। ঔষধের লিফলেট পড়তে কিন্তু ২-৩ মিনিটের বেশী লাগে না। আসলে যেকোন ঔষধেরই লিফলেট পড়বেন।
আমি প্রতিদিন সকালে ঐশীর ক’বরে যাই। ওর জন্য দোয়া করি মন থেকে। আমার খুব ভারি কা’ন্নায় আল্লাহ্র কাছে বিচার চাই। আর ঐশীকেও বলি, ‘তোর অনেক স্বপ্ন ছিল মা। বিদেশে পড়তে যাবি। ডে-কেয়ার সেন্টার দিবি। তোর বাবা কে ক্ষ’মা করে দিস মা, একজন ডাক্তারকে বেশি বিশ্বাস করেছিল। বাবা একদম বুঝে নাইরে মা। একদিন আবার দেখা হবে আমাদের চারজনের। ততদিন ভালো থাকিস মা।‘
ঐশী আ’ত্মহ’ত্যা করেনি।