ডেস্ক নিউজ
বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল সেবার মাধ্যমে সর্বোচ্চ লেনদেনের নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোবাইলে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানো সঙ্গে কেনাকাটার বিল পরিশোধ, ঋণ সুবিধাসহ যোগ হয়েছে নতুন নতুন নানা সেবা। ফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর আগ্রহের পাশাপাশি নির্ভরশীলতা বাড়ছে। গ্রাহকের সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। এর ফলে এখন দৈনিক চার হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো সেবার মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে লেনদেন হয়েছে ৯৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড। এর আগে চলতি বছরের মার্চে ৭৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা লেনদেন করেন গ্রাহকরা, যা একক মাস হিসেবে মোবাইলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। তারও আগে এক মাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ২০২১ সালের মে মাসে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
তবে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’-এর তথ্য প্রতিবেদনে যুক্ত করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, সেবাটি এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্ত নয়। নগদের হিসাব যোগ করলে মোট লেনদেন আরও ২৭ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। সেই হিসাবে এমএফএস এ লেনদেন দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা; আর দৈনিক দেনদেনের পরিমাণ হবে চার হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিকাশ, রকেটের, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে গ্রামে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার এবং শহরে রয়েছে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক। এছাড়া নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৩৫ জন এবং মহিলা গ্রাহক ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৮ রয়েছে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ১৫২ জনে।
এছাড়া শুধু ‘নগদ’-এ গ্রাহক রয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ। এ হিসাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছাড়াবে ১৮ কোটি ১৫ লাখ।
এমএফএস এ গেল এপ্রিলে মোট ৩৭ কোটি ৯৮ লাখ ১ হাজার ৭১০টি লেনদেনের মাধ্যমে ৯৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে (ক্যাশ ইন) ২৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তোলন করেছে (ক্যাশ আউট) ২৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
লেনদেন উৎসাহিত করতে সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে এমএফএস এর গ্রাহকরা দিনে এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা ও ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা করতে পারবেন। আগে দৈনিক ৩০ হাজার টাকার বেশি জমা করা যেত না। আর কার্ড থেকে টাকা জমার সীমা নির্দিষ্ট ছিল না। এছাড়া একজন গ্রাহক আরেক জনকে মাসে ২ লাখ টাকা পাঠাতে পারবেন। আগে এ সীমা ছিল ৭৫ হাজার টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্তমানে দেশের সামগ্রিক পরিশোধ ব্যবস্থায় এমএফএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোভিড-১৯-এর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমএফএসের আওতা ও লেনদেনের ব্যাপ্তি প্রসারের পাশাপাশি এ মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে এমএফএসের ব্যক্তি হিসাবের লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা দেওয়া, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে এমএফএসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ২৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৩৩১ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২৬৬৮ কোটি টাকা।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপরই ‘নগদ’-এর অবস্থান।