ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, এক যুগ ধরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশে বিনিয়োগের জন্য সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা রয়েছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার সেন্টার কনভেনশন কমপ্লেক্সের এক্সচেঞ্জ হলে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পোটেনশিয়াল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছেন। এখন আমাদেরকে পরবর্তী ধাপে (উন্নত দেশ) যেতে হবে। এ কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ দরকার।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার সেন্টার কনভেনশন কমপ্লেক্সের এক্সচেঞ্জ হলে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পোটেনশিয়াল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলন
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এক দশকে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশের অর্থনীতি, মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা ছিল না সবার। এমনকি বাংলাদেশ নামটাও অনেকের পরিচিত ছিল না। সবাই বাংলাদেশকে দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করত। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে ব্রান্ডিং ছিল না। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখন মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারছেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড পিএলসি গ্রুপের চেয়ারম্যান জোসে ভিয়ালস বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী লেরি সামার্স বাংলাদেশের অভূতপূর্ব প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে পরিবর্তন করেছে। কয়েক বছর আগেও যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ইউএস ডলার সেখান এখন মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে। কিন্তু বহির্বিশ্বে এই খবর সেভাবে ব্র্যান্ডিং হয়নি। তাই এখনো অনেকে বাংলাদেশকে আগের মতোই মনে করে। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের নিজের দেশকে ব্র্যান্ডিং করার আহ্বান জানান তিনি। তাদেরকে যুক্তরাজ্যের বন্ধুদের কাছে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে এবং যুক্তরাজ্যবাসীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন ম্যানচেস্টার সিটির মেয়র এন্ডো বার্নহাম, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বিডা) মো. সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমাতুল মুনিম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান প্রমুখ। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের কাজ চলছে। করোনার আগে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলছিল। কিন্তু পুরো বিশ্বের মতোই করোনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও আঘাত এসেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সময় উপযোগী পদক্ষেপ ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে অর্থনীতি সচল রয়েছে। দেশের আমদানি-রফতানি, রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, দেশে বিশ্বমানের অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য নানা ধরনের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের এটি সর্বোৎকৃষ্ট সময়। স্বাধীনতার সময় থেকে ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সরাসরি সহায়তা করেছে তারা। ব্রিটেনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে নানা সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে।
ম্যানচেস্টার সিটির মেয়র এন্ডো বার্নহাম বলনে, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। আমি ২০১৯ সালে প্রথম বাংলাদেশে যাই। সিলেটে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করছি। আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করব। বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমাতুল মুনিম বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা সুবিধা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৮ খাতে কর অবকাশ রয়েছে। শিল্প ও প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কর সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন উপযুক্ত সময়। যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুরোধ করেন তিনি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত এক দশকে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এমনকি করোনার সময়েও আমাদের গ্রোথ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে। দেশের পদ্মা সেতু, মেট্রারেলসহ বড় বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে মেধাবীরা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে স্টার্টআপ কোম্পানি পরিচালনা করছে। পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। দেশের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার অনুরোধ জানান তিনি।
বন্ড এখন সারাবিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ট্রেজারি, সুকুক এবং গ্রিন বন্ডসহ নতুন নতুন বেশ কিছু বন্ড আনা হচ্ছে। এগুলোতে বিনিয়োগ করলে অনেক অনেক বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে।
এছাড়া সম্মেলনে অন্য বক্তারা জানান, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের উত্তম জায়গা। বিশেষ করে জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, ব্লু-ইকোনোমি, ট্যুরিজম, হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সেক্টরে সুবিধা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য এসব সেক্টর বা এর বাইরে যেকোনো সেক্টর বেছে নিতে পারেন।