ডেস্ক নিউজ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রেকর্ড পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ ৬৬৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩.৫৪ শতাংশ বেশি। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্য মিলেছে।
অটেক্সার তথ্য মতে, গত বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ ৪৩২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছিল। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২৩২ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ ৩৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছিল।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, হতাশাব্যাঞ্জক বিশ্ব অর্থনীতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির প্রেক্ষাপটে চলতি মাসে এবং পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে এ ধরনের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। যেহেতু চলতি বছরে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে, এটি সেপ্টেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে প্রতিফলিত হবে, তাই আমরা সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে কিছুটা বৃদ্ধি দেখতে পারি। তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে। এ কারণে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাকের বিক্রি কিছুটা কমেছে। সম্প্রতি ওয়ালমার্ট, গ্যাপের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছে। চলমান ক্রয়াদেশও বিলম্বে জাহাজীকরণ করতে বলছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্টের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ৮ মাসের তুলনায় এই বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯০.৫৬ শতাংশ বেশি। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালের প্রথম ৮ মাসের তুলনায় এই বছরের প্রথম ৮ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৬২.৯৬ শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্টের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট ) যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৬ হাজার ৯২৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীন থেকে এক হাজার ৫৫৫ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করেছে এক হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পোশাক। তৃতীয় সর্বোচ্চ বাংলাদেশ থেকে দেশটির ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৬৬৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি করা সেরা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে আগস্ট এই ৮ মাসে সারাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৩৭.৩৫ শতাংশ।
২০২২ সালের প্রথম আট মাসে, চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৩৭.১৭ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বেড়েছে ৩৩.৬২ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ দশটি পোশাক সরবরাহকারী দেশের মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বছরওয়ারী ভিত্তিতে যথাক্রমে ৫৬.৯০, ৫৬.৪৮, ৫১.৬৪, ৪২.৯৬ এবং ৪২.১৬ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ( ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার। সাড়ে ৯ বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রফতানি কমে যায়। তারপর কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কার করেন উদ্যোক্তারা। ফলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশের পোশাক রফতানি। অন্যদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান বিকল্প উৎস হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেয়। তবে করোনার কারণে রফতানি আবারও নিম্নমুখী হতে থাকে। গত বছরের মে মাস থেকে বাজারটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বাড়াতে শুরু করে।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক। ওই বাজারে গত বছর বাংলাদেশ ৭১৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করে। ২০২০ সালের চেয়ে এই আয় প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি।