ডেস্ক নিউজ
সুখবর। শাকসবজি আর পচবে না। ক্ষুব্ধ কৃষককে পাকা টমেটো রাস্তায় ফেলে দিতে হবে না। সবকিছু সংরক্ষণ হবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। বাজারে আসবে প্যাকেটজাত শুকনা সবজিও। কৃষক পাবেন ন্যায্যমূল্য। কাজ পাবে লাখ লাখ বেকার। বাড়বে তরুণ উদ্যোক্তা। গ্রামের নিু আয়ের পরিবারের গৃহবধূরাও বেকার থাকবেন না।
ব্যবসা হবে বিনা পুঁজিতে। ঘরে বসে মুরগি পালন করলে আয়-রোজগার ভালোই হবে। এমন সব সুখবরের ডালি সাজিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। শুধু কথায় নয়, তারা কাজে প্রমাণ করতে চায়। সারা দেশে স্থাপিত হবে একশটি যুব সুপার শপ। পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন ডিসেম্বরে। সবই হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে।
বেকার যুবসমাজের আত্মকর্মসংস্থানে অভিনব এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘গতানুগতিক কর্মসূচি বা প্রকল্প নিয়ে লাভ হবে না। সত্যিকারার্থে দেশের বেকার যুবসমাজকে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিতেই হবে।
কারণ, সবাইকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে না। এজন্য শত শত মেধাবী উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। যাদের হাত ধরে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যয়ে অভিনব এ যাত্রায় আমরা শামিল হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক তরুণ মেধাবী ইউনিক আছে। যাদের আমরা সাহস দিয়ে কাজে লাগাতে চাই।
তারা যাতে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে গৌরবময় যুব ব্র্যান্ডে পরিণত করতে পারে।’ তিনি মনে করেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবাই একনিষ্ঠভাবে কাজ করলে এ উদ্যোগ একদিন মহিরুহ ধারণ করবে। ইনশাআল্লাহ, এমন আশা করতেই পারি। এগিয়ে যাচ্ছে যুব ব্র্যান্ড, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, মূলত কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির আইডিয়াকে যৌথভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তার সন্ধানও মিলেছে। তাদেরকে সামনে রেখে সারা দেশে ‘যুব সুপার শপ’ গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে যুব উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করাই এর মূল লক্ষ্য। এজন্য দেশের বেকার যুবসমাজকে কাজে সম্পৃক্ত করতে কার্যকর পলিসি হাতে নেওয়া হয়েছে।
তারা বলেন, দেশে যে পরিমাণ সবজি চাষাবাদ হয়, তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার অভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। সবজি পচনশীল পণ্য হওয়ায় চাষিদের খুব সস্তায় বিক্রি করে দিতে হয়। এজন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সবজি সংরক্ষণে নানা বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যুবসমাজকে এ কাজে গ্রুপভিত্তিক সম্পৃক্ত করা হবে।
পাশাপাশি ঘাটে ঘাটে মধ্যস্বত্বভোগীরা নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বিভাগীয় শহর কিংবা রাজধানী শহরে পৌঁছাতে সবজির অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দেয়। সেটিও বন্ধ করা জরুরি। অর্থাৎ এমন একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে যাতে উৎপাদন পর্যায়ে থাকা কৃষকরা সারা বছর ন্যায্যমূল্য পায়।
বিপরীতে বিপণনে থাকা যুবসমাজের বিভিন্ন ধাপের কর্মীরাও ভালো উপার্জন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। শুধু এখানেই শেষ নয়, যাতে বিশুদ্ধ ও অর্গানিক সবজি উৎপাদন ও বিপণন করা যায়, সেদিকটায়ও গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বেসরকারি উদ্যোক্তা হিসাবে এ কাজের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে যুক্ত হয়েছেন বুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষ করা দুজন তরুণ উদ্যোক্তা। যারা গড়েছেন যুব সুপার শপ। এর চেয়ারম্যান কাজী গোলাম আলী সুমন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন আহমেদ বারী। সোমবার এ দুই উদ্যোক্তার সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়।
তারা বলেন, ‘কৃষিপণ্য সংরক্ষণে আমরা নতুন আইডিয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। ফ্রোজেন বা হিমায়িত সবজির চেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি সবজিকে ড্রাই বা শুকনা করে প্যাকেটজাত সবজি বিপণনের ওপর। ২০ ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে উন্নতমানের বিশুদ্ধ শুকনা সবজিতে রূপান্তর করা হবে। শুকনা বলতে বিশেষ পদ্ধতিতে সবজি থেকে পানি বের করে ফেলা। এরপর তা প্যাকেটজাত সবজি হিসাবে বিক্রি করা। তবে এগুলো যখন রান্নার জন্য পানিতে মেশানো হবে, তখন তা পুনরায় টাটকা সবজিতে পরিণত হয়ে যাবে।’
তারা বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় কথা হলো-এসব সবজি সংরক্ষণে যেসব মেশিনারিজ ব্যবহার করা হবে, তা সবই দেশে তৈরি। পাশাপাশি ফ্রোজেন পদ্ধতিতেও দ্রুত পচনশীল শাকসবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ তরুণ উদ্যোক্তারা বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা কুমিল্লা সদরের উত্তর গলিয়ারা ইউনিয়নের কনেশতলা গ্রামে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি, যা এপ্রিলে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এটি চালু হলে এলাকার কয়েকশ যুবসমাজের চাকরির ব্যবস্থা হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৫-২০ জনের টিম করে দেওয়া হবে।’ তারা আরও বলেন, ‘সরকারি অর্থে কখনো উদ্যোক্তা তৈরি করা যায় না। তাই আমরা নিজেদের অর্থায়নে কাজ শুরু করেছি। তবে এখানে সরকার তথা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রশাসনিক সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।’
গৃহবধূদের হাতে বিনা পুঁজির ব্যবসা: আমাদের গ্রামগুলোয় এখনো বহু গৃহবধূ ঘরকন্নার রুটিন কাজ ছাড়া একরকম বেকার সময় পার করে থাকেন। তাই স্বামীর পাশাপাশি একজন স্ত্রী কীভাবে ঘরে বসে বিনা পুঁজিতে প্রতিমাসে সম্মানজনক আয়-রোজগার করতে পারেন, সেজন্য আগ্রহী এনজিওগুলোর মাধ্যমে মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করা হবে। যেমন, একজন গৃহবধূকে ১০০টি কক মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করা হলো।
তিনি সেগুলো কীভাবে লালনপালন করবেন, এ বিষয়ে তাকে আগেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এনজিগুলোর মাঠকর্মীরা সক্রিয় থাকবেন। তিন মাসের মধ্যে মুরগির বাচ্চাগুলো বাজারে বিক্রির পর্যায়ে চলে আসবে। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিটি মুরগির পেছনে খরচ হবে ৮০ থেকে ১১০ টাকা। বিক্রি করা যাবে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।
সেখানে খরচ বাদ দিয়ে লাভের ১০ শতাংশ টাকা এনজিও কেটে রাখবে। লভ্যাংশের বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট গৃহবধূকে দেওয়া হবে। এভাবে তিনি একশ মুরগি পালন করে তিন মাসে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে মুরগির সংখ্যা বাড়লে লাভের পরিমাণও বাড়বে।
কক মুরগি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মশিয়ুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ফার্মের মুরগির মধ্যে মোরগকে কক বলা হয়। এটি দেখতে অনেকটা দেশি জাতের মতো মনে হয়। তবে রোস্টসহ নানা কারণে বাজারে এখন কক মুরগির চাহিদা বেশি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একদিনের একটি কক বাচ্চা ভালোভাবে লালনপালন করতে পারলে তা তিন মাসের মধ্যে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনে পরিণত হয়। এতে প্রতিটির পেছনে খরচ পড়বে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বিক্রি হবে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
সূত্র জানায়, কক মুরগি চাষের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কয়েকটি জেলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে উঠান বৈঠক করা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে প্রশিক্ষণ দিয়ে এর বাচ্চাও সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় ডিসিরা এ বিষয়টি তদারকি করবেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তরের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলো যাতে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ নিতে পারে, সেজন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।