ডেস্ক নিউজ
কিশোর-তরুণরা যেন অপরাধে না জড়ায়, ‘কিশোর গ্যাং’-এর নামে ধ্বংসের পথে না যায়, সে জন্য যুবসমাজকেও উদ্যোগী হতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। সোমবার জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘সম্ভাবনার পাশাপাশি যুব সমাজের সামনে চ্যালেঞ্জও অনেক। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কর্মসংস্থানের অভাব, অপরাধ ও সহিংসতা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়।’ খবর বিডিনিউজের।
আজকাল প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘কিশোর গ্যাং’-এর বিভিন্ন অপরাধের যে খবর আসে, সে কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এতে অনেক যুবকের ভবিষ্যত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারেও যুবসমাজকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু নিজে ভাল থাকলে চলবে না, অন্যরাও যাতে ভাল থাকে, সে চেষ্টাও করতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকদেরও খেয়াল রাখতে হবে, তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার পাশাপাশি যাতে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে।’
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় যুবসমাজের সম্পৃক্ততার ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আগামী দিনে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে তারা (যুবসমাজ) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, সে বিষয়ে আমার গভীর আস্থা রয়েছে। যুবকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সাহসিকতা আমাদেরকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। ‘আমার বিশ্বাস, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাদের ধ্যান-ধারণা ও আগ্রহ অন্যদেরকেও শক্তি যোগাবে এবং দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের অভিযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য। কোভিড-১৯ এর সর্বগ্রাসী ভয়াবহতা মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার আমাদের বিপুল যুবসমাজের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, অমিত সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে অবশ্যই উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাবতীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, কর্মসম্পাদনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাপ্ত সরকারী-বেসরকারী সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ দেশের মোট জনসংখ্যার কাজের বয়সীদের আধিক্যের সুবিধা (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবনকাল এবং মানবসম্পদের শ্রেষ্ঠ অংশ যুবসমাজ। আমাদের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ, যা সংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে, আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সদ্ব্যবহার করা। সে জন্য যুবদেরকে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ২৭ জন সফল আত্মকর্মী ও সংগঠককে জাতীয় যুব পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের পদক ও বিভিন্ন অঙ্কের চেক দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল পুরস্কার তুলে দেন। আত্মকর্মী (সারা দেশে) ক্যাটাগরিতে তিনজন, বিভাগীয় কোটায় প্রতি বিভাগে দুজন করে আট বিভাগের মোট ১৬ জন, নারী কোটায় একজন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক) কোটায় একজন ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় একজন আত্মকর্মী এ পুরস্কার পাবেন। এছাড়া যুব সংগঠক কোটায় পাঁচজনকে জাতীয় যুব পুরস্কার দেয়া হয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া সচিব আখতার হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাসচিব আজহারুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।