ডেস্ক নিউজ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসের ‘সম্মানিত অতিথি’ হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট শুরু করেছিল এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বর্বরতম নৃশংসতা ও গণহত্যা চালিয়েছিল। এই দিনে মোদির উপস্থিতি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সর্বাত্মক সমর্থনের সেই স্মৃতিও পুনরায় সবার মাঝে ফিরিয়ে আনবে, যখন অসহায় মানুষ ভয়ংকর দমন-পীড়ন ও নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হয়েছিল, ১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল, এবং ভারতের জনগণ ও সরকার তাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মোদির ঢাকা সফর তিনটি মহাকাব্যিক পর্বের সঙ্গে যুক্ত হবে – মুজিববর্ষ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ); বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর; এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর। করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের মাটির বাইরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এটিই হবে প্রথম সফর। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যে ভারতের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মোদির এই সফল সে বিষয়টিকে সবার সামনে তুলে ধরবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রকৃতি বহুমুখী এবং এর শেকড় একই সাধারণ ইতিহাস, ভৌগলিক সান্নিধ্য এবং দুদেশের সংস্কৃতির সাদৃশ্যের অনেক গভীরে প্রোথিত। বাংলাদেশের মুক্তির জন্য ভারতের যে অবদান তারই গভীর থেকে সৃষ্টি হয়েছে এক সংবেদনশীল ও আবেগঘন বন্ধন। আর এ বন্ধনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জগতে আজ প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে দুই দেশ দিন দিন আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। তদুপরি, অভিন্ন নদীর জলের উপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা যে এই দু’দেশের সম্পর্কের মাঝখানে নাড়ির সংযোগ, তা সবসময়েই এক জ্বলন্ত স্মরণচিহৃ হয়ে রয়ে গেছে।
অর্থনীতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এই দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরে বহুমুখী হয়ে উঠেছে, বাণিজ্য লেনদেন, যৌথ উদ্যোগ, ট্রানজিট সুবিধা এবং পরিবহনখাতে উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো দুই দেশের কাছেই বেশ গুরুত্ব পেয়েছে।
বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম আর্থিক সহায়তা প্রাপ্ত দেশ হওয়া কথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর সর্বশেষ ঢাকা সফরের সময় (৬-৭ জুন, ২০১৫) ঘোষণা করেছিলেন যে ভারত বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ঋণ সহায়তা (লাইন অব ক্রেডিট) দেবে। বাংলাদেশ নিজের ইচ্ছেমতো এই ঋণ ব্যবহার করতে পারবে। এ ঋণের সুদের হার সর্বনিন্ম, মাত্র এক শতাংশ, এবং ২০ বছরের সঙ্গে অবকাশকালীন আরও ৫ বছর সময়সীমার মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে।
এর আগে, ২০১০ সালের এর আগস্টে ভারত বাংলাদেশকে বিশেষখাতে, বিশেষ করে রেলপথে ব্যবহার করতে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) দিয়েছে । এই ঋণের প্রথম অংশটি অবকাঠামো এবং পরিবহনখাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এক বিলিয়ন ডলারের এই ঋণের ২০০ মিলিয়ন ডলার লাইন অব ক্রেডিটকে পরে অনুদানে রূপান্তর করা হয়েছিল। কার্যত, একটি তুচ্ছ অংশ ব্যতীত, পুরো পরিমাণ এরই মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে অনুদান হিসাবে রূপান্তরিত হয়েছে এমন ২০০ মিলিয়ন ডলারের জন্য কোনও সুদ নেওয়া হবে না। এক শতাংশ সুদের হারে বাকি ৮০০ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার হচ্ছে, এর মধ্যে সাতটি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ে খাতে লোকোমোটিভস, ট্যাঙ্ক ওয়াগনস, ফ্ল্যাট ওয়াগনস এবং ব্রেক ওয়াগন সরবরাহের জন্য প্রায় ৬৩০ মিলিয়ন ডলারের ১১ টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভারত সরকারের প্রচেষ্টার সমান্তরালে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বেসরকারী খাতও এগিয়ে এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে ভারত বাংলাদেশকে একটি “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার” হিসাবে দেখছে এবং উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও যৌথ উদ্যোগ এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে আগ্রহী। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বোর্ডে (বিওআই) ৩৮ টি ভারতীয় বিনিয়োগকারী নিবন্ধন করেছিল, যা পরিমাণে ১৮৩ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
ইন্ডিয়ান এয়ারটেল, টাটা মোটরস, সান ফার্মা, এশিয়ান পেইন্টস, মেরিকো, গোদরেজ, ভেনকি’র হ্যাচারি, পার্লে প্রোডাক্টস, ফোর্বস এবং মার্শালের মতো বড় বড় ভারতীয় কোম্পানি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিটে ভারতের দুটি বড় শিল্পসংস্থা রিলায়েন্স এবং আদানী বাংলাদেশে ১ হাজার ১শ’ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিশাল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়।
এছাড়া ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। সম্প্রতি চেন্নাই ও মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত রোড শো চলাকালীন লিমুজিন সার্ভিসেস, থ্রি-হুইলারের উত্পাদন ও সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের মতো খাতে প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাবে বেশ কয়েকটি ভারতীয় ও বাংলাদেশী কোম্পানি সই করেছে।
তৈরি পোশাক খাতে (আরএমজি) ভারতীয় বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। ২০০৭ সালে চেন্নাই ভিত্তিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান আম্বাত্তুর বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছিল এবং পরে অধিগ্রহণের মাধ্যমে নিজস্ব উত্পাদন ইউনিট স্থাপন করেছিল। বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি আগে হেলিক্স গার্মেন্টস কার্যক্রম শুরু করে। মারিকো এবং গোদরেজের মতো গ্রাহক ব্র্যান্ডগুলি বাংলাদেশে তাদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে। সিইএটি বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশের এ কে খান গ্রুপের সাথে চুক্তি করেছে ভারতীয় টায়ার উত্পাদনকারী জায়ান্ট সিইএটি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান স্থিতিস্থাপকতা ভারতীয় বিনিয়োগকে আকর্ষণ করে চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে দেশে গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশ নিম্ন-আয়ের থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এতে ভোক্তা পণ্য এবং পরিষেবাগুলোর চাহিদাও বাড়ছে। দেশটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবেও যোগ্যতা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই পরিবর্তন ভারতীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নজর এড়ায়নি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্বাচিত সেবা ও উত্পাদন খাতে প্রত্যক্ষ ও যৌথ বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়েও এসেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ারিদ টেলিকম বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। পরবর্তী বছরগুলিতে প্রতিষ্ঠানটি আরও প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং ওয়ারিদ টেলিকমের নতুন করে নামকরণ করেছে এয়ারটেল বাংলাদেশ।
গত ৯ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ-ভারত ‘মৈত্রী সেতু’ (বন্ধুত্ব সেতু) উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছিলেন, আঞ্চলিক সংযোগ কেবল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শুধু বন্ধুত্বকেই জোরদার করে না, শক্তিশালী বাণিজ্যিক সংযোগও গড়ে তোলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই মতামত ব্যক্ত করেছিলেন যে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এমন সংযোগ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ বাণিজ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
‘একসঙ্গে উন্নয়নশীল অঞ্চল গড়ার’জন্য ভারতের প্রশংসা করেছেন এবং ‘মৈত্রী সেতুর সফল পরিচালনা ও ব্যবহার ‘র জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই সেতুটির উদ্বোধন “এই অঞ্চলের সংযোগ জোরদারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ”।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সর্বশেষ ঢাকা সফরকালে, ৪,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেসময় রিলায়েন্স পাওয়ার ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩ হাজার মেগাওয়াট উত্পাদন করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। দ্বিতীয় সমঝোতা অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি কয়লাচালিত প্লান্ট স্থাপন করবে।
নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে আসামের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত উচ্চ গতির ডিজেল সরবরাহের পাইপ লাইন নির্মাণে বাংলাদেশ ও ভারত একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সদিচ্ছার ইঙ্গিত হিসাবে এরই মধ্যে ২ হাজার ২০০ টন ডিজেলের একটি প্রাথমিক চালান ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ৫০টি ওয়াগনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুরে পরিবহন করা হয়েছে। পাইপ লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্তটি মোদির শেষ সফরের সময় নেওয়া হয়েছিল।
ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড (বিএইচইএল) খুলনায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে। লারসন এবং টুব্রো (এলএন্ডটি) এবং দুটি চীনা কোম্পানিকে দরপত্রে হারিয়ে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট চূড়ান্ত ধারণক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো রাখার উদ্বেগ থেকেই এই ‘মৈত্রী’(বন্ধুত্ব) প্রকল্পে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে প্রতিবেশি দেশ ভারত।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের বিদ্যুৎ উত্পাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের (এনটিপিসি) যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) খুলনার বাগেরহাটের রামপালে মোংলা নদী বন্দরের কাছে ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি কয়লা চালিত সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল। “মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প” নামে পরিচিত এই প্রকল্পটি। বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে চলেছে এটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিপিডিবি এবং এনটিপিসির একটি অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প। এর মালিকানা ও উৎপাদিত বিদ্যুতেরও সমান ভাগ পাবে কোম্পানি দুটি। বর্তমানে এ প্রকল্পের তীব্র বিরোধীতা করছে বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন।
নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এর আগে কখনও এতো ভালো ছিলো না। নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে যেসব বিষয় উদ্বেগের বিষয় হয়ে ছিল, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সেসব বড় বড় ইস্যুতে সাড়া দিয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের বড়ো একটি অংশকে বাংলাদেশ হস্তান্তর করেছে ভারতের হাতে। এই বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছিল। উভয় দেশের মধ্যে কোনো প্রত্যার্পন চুক্তি না থাকলেও বাংলাদেশ সরকার তা করেছে। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজন মেজর অনুপ চেটিয়া, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের জন্য বড়ো মাথাব্যথার কারণ ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ তাকেও ভারতের হাতে সোপর্দ করেছে।
নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এর আগে কখনও এতো ভালো ছিলো না। নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে যেসব বিষয় উদ্বেগের বিষয় হয়ে ছিল, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সেসব বড় বড় ইস্যুতে সাড়া দিয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের বড়ো একটি অংশকে বাংলাদেশ হস্তান্তর করেছে ভারতের হাতে। এই বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছিল। উভয় দেশের মধ্যে কোনো প্রত্যার্পন চুক্তি না থাকলেও বাংলাদেশ সরকার তা করেছে। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (উলফা) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজন মেজর অনুপ চেটিয়া, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের জন্য বড়ো মাথাব্যথার কারণ ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ তাকেও ভারতের হাতে সোপর্দ করেছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকে যেসব দীর্ঘকালীন সমস্যা ছিল তার অনেকগুলো সমাধান হয়ে গেছে। এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো, দীর্ঘকাল ধরে স্থগিত রেল, সড়ক ও নৌপথ সংযোগ পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বা সংযোগ জোরদার করা। ছিটমহল বিনিময় এবং দীর্ঘকাল ধরে চলমান সীমান্ত বিরোধগুলোও সমাধান করা হয়েছে। সীমান্তের বাইরে অবস্থিত ছিটমহল বিনিময় করতে ও সীমান্ত চিহ্নিত করতে ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষই সর্বসম্মতিক্রমে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে সমর্থন ও অনুমোদন দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে এক বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করে।
যদিও এখন দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিরোধের বেশিরভাগ সমাধান হয়ে গেছে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের ইস্যুটি এখনও সমস্যা হিসাবেই রয়ে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাঁর শাসনামলে সমস্যাটি সমাধান করা হবে। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে ভারত একটি ফেডারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কাজ করে এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয় না। তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে রাজি করাতে হবে, কারণ তারাও এ নদীর অংশীদার।
দুই দেশই শুধু যে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে, তা নয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, শক্তি ও বিদ্যুৎ, মহাকাশ, উন্নয়ন প্রকল্প, সংস্কৃতি এবং জনগণের আদান-প্রদানসহ সব ফ্রন্টে তাদের বন্ধন আরও গভীর করেছে। তাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে দু’দেশ গত কয়েক বছরে প্রায় শখানেক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ চুক্তি কেবল পূর্ববর্তী চুক্তিগুলির পুনর্নবীকরণ নয়, মহাকাশ, নাগরিক এবং পারমাণবিক শক্তি, আইটি এবং ইলেকট্রনিক্স, সাইবার-সুরক্ষা এবং নীল অর্থনীতির মতো উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার সূচনা করেছে।
সমস্ত চুক্তি ও চুক্তি বাস্তবায়নের তদারকি দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ পর্যবেক্ষণে থাকবে। এর আগে অনেক চুক্তি হয়েছিল তবে এর সবই বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছেনি। চুক্তিগুলির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে উভয় দেশ এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার নিবিড় পর্যবেক্ষণে জড়িত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।