ডেস্ক নিউজ
পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সেতু চালু হওয়ার পর এক মাস শেষে দেখা যাচ্ছে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। এ হারে যদি টোল আদায় হয় তাহলে বছরে টোল উঠবে ৯১২ কোটি টাকা। আর ৩০ বছরে উঠবে ২৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা এবং ৩৫ বছরে উঠবে ৩১ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে যে হারে টোল আদায় হচ্ছে তাতে পদ্মা সেতুর ব্যয় উঠতে সময় লাগতে পারে ৩৫ বছর। এমনটিই মনে করছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের সময়ের আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে আমরা অনুমান করে বলে আসছিলাম পদ্মা সেতুর নির্মাণের ব্যয় উঠতে পারে ৩০ থেকে ৩৫ বছরে। তবে আমরা অপেক্ষায় ছিলাম এক মাসে কী পরিমাণে টোল আদায় হয় সেটি দেখার জন্য। গত ২৫ জুলাই এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এই এক মাসে ৭৬ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে পদ্মা সেতুতে। এখন আমরা এই এক মাসের টোল আদায়ের পরিমাণকে ধরে ধারণা করতে পারি এক বছরে কত টোল উঠতে পারে, ১০ বছরে কত কিংবা ৩০ বছরে কত উঠতে পারে। প্রথম মাসে যে হারে টোল আদায় হয়েছে তাতে পদ্মা সেতুর ব্যয় উঠতে সময় লাগবে ৩৫ বছরের কিছু কম সময়।
এদিকে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে এক বছর যে টোল আদায় হয়েছে, পদ্মা সেতুতে তার চেয়ে বেশি টোল আদায় হয়েছে এক মাসেই। বর্তমানে দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মা সেতু, এটা ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সেতু, দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেতু দুটি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীন। দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগের লক্ষ্যে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয় ১৯৯৮ সালে। প্রথম বছর সেতুটি থেকে আসে ৬২ কোটি টাকা। অবশ্য বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়ে পদ্মা সেতুতে টোলের হার প্রায় দ্বিগুণ।
৩০ দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৫৩টি। এ সময় প্রতিদিন যানবাহন চলেছে গড়ে ২১ হাজার। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ দিনে আয় হয়েছে গড়ে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর ২৬ জুন থেকে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল শুরু করে। প্রথম দিনেই এ যাবৎ এক দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়। এর ৭৫ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল। কিন্তু ওই দিন রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর সেতু দিয়ে এই বাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন যানবাহন চলাচলের সংখ্যা ২৩ হাজারের কাছাকাছি নেমে আসে। মোটরসাইকেল বন্ধের পর সর্বাধিক ৩২ হাজার ৪৪৬টি যানবাহন চলে ১১ জুলাই, পবিত্র ঈদুল আজহার পরদিন।
পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হলেও এ টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ১ শতাংশ সুদে ৩৫ বছরে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য তিন মাস পরপর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে ১৪০ কিস্তিতে ঋণের টাকা (সুদ ও আসলে) পরিশোধ করা হবে। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকারের ঋণ মওকুফ ফান্ডের অর্থ ৩০০ কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। ফলে সেতু বিভাগকে আসল হিসেবে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। অর্থাৎ সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।