ডেস্ক নিউজ
দেশে প্রথমবারের মতো রংপুরে নির্মিত হয়েছে ১০ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও এক জায়গা থেকে সবরকম সেবা প্রদানে বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন এটি। সমন্বিত সরকারি ভবন নির্মাণে দেশের সব বিভাগের মধ্যে এটিই প্রথম। এর আদলে আগামীতে অন্যান্য বিভাগেও এমন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে।
রবিবার (১৬ জানুয়ারি) উদ্বোধন করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর ও মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম।এখানে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজিসহ অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিভাগীয় কার্যালয়।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা বলেন, এক ছাদের নিচে বিভাগীয় প্রশাসনের সব সেবাপ্রাপ্তিতে জনভোগান্তি দূর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি আট জেলা নিয়ে দেশের সপ্তম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগ গঠন করা হয়। একই বছরের মার্চ মাস থেকে রংপুর জেলা প্রশাসকের পুরাতন ভবনে রংপুর বিভাগের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে দিয়ে রংপুর বিভাগের মানুষের বিভাগীয় সরকারি সেবাসমূহ গ্রহণের পথ সহজ হলো। জনগণ যেন এক জায়গায় এসে সেবা গ্রহণ করতে পারে, সেজন্য সমন্বিত সরকারি ভবন নির্মাণ বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা। এতে করে জনগণের হয়রানি কমবে এবং কৃষি জমির ওপর বাড়তি চাপ লাঘব হবে।
তিনি বলেন, রংপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর ২০১৬ সালে ১০ তলা বিশিষ্ট রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য তৎকালীন ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রংপুর প্রাচীন জেলা। রংপুর বিভাগ ঘোষণা করা হলেও বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজিসহ অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য কোনো কার্যালয় ছিল না। ১০ তলা বিশিষ্ট একটি বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণ করা হলে সরকারি কাজের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে গণপূর্ত অধিদফতর নগরীর উত্তম হাজীরহাটে পুরাতন রেডিও সেন্টারের পাশে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ১৫ একর জমি নিয়ে রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।প্রকল্পের মেয়াদকালে ২০২১ সালের জুন মাসে বিভাগীয় সদর দফতরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এতে ১০ তলা বিশিষ্ট ভবনের পাশাপাশি ৭২০ আসনের ২ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হলরুম, ৮শ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন সাবস্টেশন ভবন, ৫শ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, পাম্প হাউস, ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার, ৪০ হাজার গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন ফায়ার জলাধার, গার্ডসেড ও গেট, বাউন্ডারি ওয়াল, আরসিসি রাস্তা, কম্পাউন্ড ড্রেন, মাটি ভরাট, আরবি কালচার, বহিঃস্থ বিদ্যুতায়ন, বহিঃস্থ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া ভবনে ব্যাংক, পোস্ট অফিস, ক্যান্টিন, রান্নাঘর, সিকিউরিটি রুম, এসিল্যান্ড অফিস, ট্রেনিং রুম, ক্লাস রুম, ক্যান্টিন, ক্যাফে কর্নার, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, মিটিং রুম রয়েছে। এই ভবনে ৩টি প্যাসেঞ্জার ও একটি ফায়ার লিফট, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সোলার সিস্টেম, সিসিটিভি সিস্টেম, সার্ভার সিস্টেম, সাবমারসিবল ও সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ৯২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে ভবন নির্মাণের পর বেঁচে যাওয়া আড়াই কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয় গণপূর্ত অধিদফতর।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জেলা প্রশাসকের পুরাতন ভবনে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় হিসেবে দীর্ঘ ১১ বছর দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিভাগীয় প্রশাসনের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে দশতলা বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটি উদ্বোধন হলে বিভাগীয় প্রশাসনের কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ ডিআইজি রংপুর রেঞ্জ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার ও বাংলাদেশ কর্মচারি কল্যাণ বোর্ড, যুগ্ম নিবন্ধক, বিভাগীয় সমবায় ও বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়, ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টসের কার্যালয় থাকবে। ফলে একজন সেবাগ্রহীতার যাতায়াত খরচ কমে যাবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে একই স্থান থেকে তারা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। অত্যাধুনিক এই বিভাগীয় সদর দপ্তরের উদ্বোধনকে ঘিরে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। পুরো সড়কের দুই পাশে ফুলের গাছ ও বিভিন্ন রঙয়ের পতাকা লাগিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ভবনের সম্মুখভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে বিভিন্ন উন্নয়ন ও অর্জন নিয়ে ছোট-বড় ফেস্টুন সাটানো হয়েছে।