ডেস্ক নিউজ
রাজধানীতে গতানুগতিক অপরাধ কমে গেছে। বেড়েছে তথ্য প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশ সময়ই আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রযুক্তি দিয়েই প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চালু হচ্ছে ‘সেভ ঢাকা’ প্রকল্প। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। রাজধানীকে পুরোপুরি প্রযুক্তির আওতায় আনা হবে। বসানো হবে ৫০ হাজার শক্তিশালী গোয়েন্দা ক্যামেরা। তবে অর্থাভাবে প্রতিবছর ১০০-২০০ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঢাকার প্রবেশ ও বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতে গোয়েন্দা ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ম্যানুয়াল বা গতানুগতিক অপরাধ কমে গেছে। বাড়ছে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ ম্যানুয়াল সোর্স দিয়ে প্রতিরোধ বা অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা কঠিন। প্রায় সময়ই তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না। বিশেষ করে এখন অপরাধীরা ম্যানুয়ালভাবে অপরাধ করতেও বিভিন কৌশল অবলম্বন করে। এতে করে তাদের চেহারা চেনা যায় না। বিশেষ করে এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সময় অপরাধীরা নিজেদের চেহারায় পরিবর্তন আনে। যেটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেনদরবার চলছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশের পর প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজধানী ৫০টি ছাড়াও আশপাশের এলাকায়ও এসব ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। যাতে অপরাধীরা অপরাধ করার পর থানা এলাকার বাইরে গিয়ে আত্মগোপন করতে না পারে। এসব প্রযুক্তির সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থাও থাকছে। উন্নত প্রযুক্তির এসব গোয়েন্দা ক্যামেরায় থাকছে স্বয়ংক্রিয় এ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর পেস্নট চিহ্নিতকরণসহ ১১ ধরনের সুবিধা। এসব প্রযুক্তি যুক্ত করা হবে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের সঙ্গে। যাতে বিপদগ্রস্ত মানুষ জরুরি সেবায় ফোন করে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, রাজধানীতে গতানুগতিক অপরাধ তুলনামূলক অনেক কমে গেছে। বাড়ছে প্রযুক্তিগত অপরাধ। আবার অপরাধ ম্যানুয়াল হলেও নানা কারণে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, অপরাধীরা অপরাধ করার সময় নিজেদের চেহারা ঢেকে রাখে বা মুখোশ পরিধান করে বা নানা সাজে সেজে থাকে। এ জন্য অপরাধীদের শনাক্ত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তায় বেশ কিছু গোয়েন্দা ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো রাজধানী প্রযুক্তির আওতায় আনতে ৫০ হাজার গোয়েন্দা ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধীদের চেহারা শনাক্ত করা হবে। ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বেশীরভাগ অপরাধীরাই অপরাধ করার পর ঢাকার বাইরে চলে যেতে চায়। সে দিক বিবেচনা করে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোতে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু গোয়েন্দা ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যার সুফলও মিলছে। বিভিন্ন বেশে অপরাধ করা অপরাধীদের প্রকৃত চেহারা বা প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করতে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, কারা অধিদপ্তর, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, বিটিআরসি, বিআরটিসি ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। কারাগারে যাওয়া ও বের হওয়া অপরাধীদের একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। আর পুলিশের সব বিভাগে থাকা অপরাধীদের ডাটাবেজ ও অন্যান্য সংস্থার কাছে ডাটাবেজ নিয়ে অপরাধীদের বিশাল এক তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিটিআরটিসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন) অপরাধীদের ব্যবহার করা প্রযুক্তি বা মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করলে, সে সর্ম্পকে তথ্য দিবে। ইতোমধ্যেই মোবাইল ফোন অপরারেটর কোম্পানিগুলোকেও বেনামী সিম কার্ড বিক্রি না করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি এ ব্যাপারে বিটিআরসিও মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোকে বলেছে। আর যেসব অপরাধী অপরাধ করতে যানবাহন ব্যবহার করছে, সেসব যানবাহন সম্পর্কে তথ্য দেবে বিআরটিসি (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি)। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এর বাইরে কোনো অপরাধী যাতে অপরাধ করার পর বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে, এ জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ ও ইমিগ্রেশন বিভাগ অপরাধ করার পর যাতে স্থল সীমান্ত পয়েন্ট বা বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে। আর নির্বাচন কমিশনকে অপরাধী সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য সররাহের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের সঙ্গে পুলিশের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকায় ৫০ হাজার ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দের কারণে প্রতিবছর ১০০-২০০ করে ক্যামেরা বসাতে হচ্ছে। তথ্য ভান্ডারে থাকা অপরাধীদের সঙ্গে পলাতক বা সদ্য গ্রেপ্তারকৃত অপরাধীদের ছবি মিলিয়ে দেখা হবে। এমনকি ওইসব অপরাধী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রাখা হচ্ছে তথ্য ভান্ডারে। এমন প্রযুক্তি চালু করতে ‘সেভ ঢাকা’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় সুনির্দিষ্ট করে নির্ধারিত হয়নি। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় কমতে বা বাড়তে পারে।