নাটোর প্রতিনিধি:
করোনার নমুনা সংগ্রহ করা নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও নাটোর পৌর এলাকার লালবাজার মহল্লায় বসবাস করা ডাঃ রাজেশ সাহা করেনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ায় রাতের অন্ধকারে পালিয়েছে। গতরাতে লালবাজার মহল্লার তার মামার বাড়ীতে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি জানতে পারেন তার করোনা ভাইরাসের ফলাফল পজেটিভ এসেছে। পজেটিভ জানার পরও তিনি সকলের সাথে আড্ডায় মত্ত ছিলেন। প্রতিবেশীদের কোন কথায় কান দেননি তিনি। সকলের সামনে দাঁড়িয়েই বলেন তিনি বর্তমানে নাটোরের সিংড়ায় তার বাড়ীতে অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী রাতেই প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদকের কাছে মোবাইল ফোনে অভিযোগ করে বলেন প্রশাসনের সহযোগীতায় ডাঃ রাজেশের বাড়ীটি লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। এ সময় ডাঃ রাজেশ সাহা সহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বাড়ীতেই একসাথে বসবাস করেন। পরে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের পরিবারের সকলকে বাড়ীর ভিতরে থাকতে বললে তারাও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে ডাঃ রাজেশ সাহা রাতের অন্ধকারে একটি এ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাতে চড়ে পালিয়ে যান। এদিকে ডাঃ রাজেশ সাহা যে বাড়ীতে বসবাস করে আসছিলেন সেই বাড়ীতে তার মামা মামি ভাই বোন সহ একাধিক সদস্য বসবাস করেন যৌভভাবে। তাদের মধ্যে কয়েকজন শহরের মাদ্রাসা কাঁচা বাজারে মুদি দোকানদার ও স্বাস্থ্য কর্মিও রয়েছেন। ডাঃ রাজেশ সাহার পালিয়ে যাওয়ার পর ওই পরিবারের কেউ কোন ধরনের সরকারী নিয়ম মানছেন না। তারা যথারিতি পূর্বের ন্যায় চলাফেলা করছেন। করছেন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, ডাঃ রাজেশ সাহা নাটোরের সিংড়ার সন্তান। নাটোর সদর হাসপাতালে চাকুরী সুত্রে সে তার মামার বাড়ী লালবাজারে বসবাস করেন। এখান থেকেই সে হাসপতালে যাতায়াত করেন। তারা শুনেছেন তার সিনিয়র চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এরপর তিনি শনিবার সন্ধায় করোনা পজেটিভ হয়। ঘটনার পর তাকে সহ পরিবারের সকলকে এলাকায় চলাফেরা করতে দেখা গেলে তাদের বাড়ীতে থাকার পরামর্শ দেন এলাকার মানুষজন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ডাঃ রাজেশ সাহা এলাকার মানুষের সাথে অশোভন আচরন করেন। পরে এলাকাবাসীর সাথে তাদের কথা কাটাকাটির ঘটনাও ঘটে। কিন্তু কোন কথার কর্ণপাত করেনি রাজেশ সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। কথার মাঝে রাজেশ বলে তিনি কাগজে কলমে সিংড়ায় রয়েছেন। কেউ তার কিছুই করতে পারবে না। চিকিৎসকের এমন আচরনে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী তাদের সকলকে বাড়ীতে লকডাউনে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু কারও কোন কথা না শুনে রাতের অন্ধকারে এ্যাম্বুলেন্সে চড়ে পালিয়ে গেল ডাঃ রাজেশ সাহা। আর সকাল থেকে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের নিয়মিত কাজে যোগদান করলেন।
ডাঃ রাজেশ সাহার মামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন রাজেশ এক সপ্তাহ আগেই বাড়ী থেকৈ চলে গেছে আবার কেউ বলেন গত ২ জুলাই রাজেশ সিংড়ায় গেছে আর আসেনি। এছাড়াও আরো অনেকে বলেন রাজেশ এখানে থাকেনা সে হাসপাতাল থেকে বাড়ীতে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে তাদের সাথে দেখা করে যায়। কিন্তু অনেকদিন ধরেই রাজেশ আসেনা বাড়ীতে।
প্রতিবেশীরা বলেন, রাজেশ রাত সাড়ে ৮টার দিকেও বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলো। এছাড়া রাজেশ এখানেই থাকতেন সকলের সাথে। করোনা ভাইরাস পজেটিভ হয়েছে জেনেও সে কারও কোন কথায় গুরুত্ব দেয়নি। পরে রাতে বাড়ীর সামনে গাড়ীর শব্দ শুনে বের হলে দেখা যায় একটি এ্যাম্বুলেন্স থেমে রয়েছে। পরে সেই এ্যাম্বুলেন্সে চড়ে রাজেশ চলে যায়। তারা ম,নে করেন তাকে কোন একটি স্থানে আটকিয়ে না রাখলে তিনি সমাজের জন্য ভংঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। করোনা ভাইরামেস আক্রান্ত হওয়ার পর একজন চিকিৎসক যদি এভাবে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায় তাহলে সে ভয়ঙ্কর মানুষ।দ্রুত তাকে আটক করা দরকার।
এ বিষয়ে ডাঃ রাজেশের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি গত কয়েকদিন আগেই নাটোরের মামার বাড়ী থেকে সিংড়ায় এসেছেন। এখন তিনি সিংড়াতে রয়েছেন। পরে কত তারিখে সিংড়াতে গিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনা। এক পর্যায়ে তিনি বলেন আজই এসছেন ,একটু আগেই এসেছেন আবার বলেন তিনি মামার বাড়ীতেই আছেন। একক সময় একেক ধরনের কথা বলেন তিনি।
এ বিষয়ে নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একজন চিকিৎসক কেন বাড়ী থেকে পালিয়ে যাবেন। তিনি যেই বাড়ীতে রয়েছেন সেখানেই তাকে থাকার জন্য বলা হয়েছে। সেখানে থাকতে যদি কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে তার সুবিধামত স্থানে আইসোলেশনে থাকতে হবে। এছাড়াও তিনি সকালেও ডাঃ রাজেশের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। বিষয়টি এখন খোঁজ করে দেখা হবে। তিনি যে বাড়ীতে ছিলেন প্রয়োজনে সেই বাড়ীটি লকডাউন করা হবে। আর এখান থেকে কোথায় গেছে সেই স্থানও শনাক্ত করে সেখানেও লকডাউন করা হবে। একজন করোনা পজেটিভ রোগী কোন ভাবেই বাহিরে থাকতে পারবেন না।