নিউজ ডেস্ক :
রাশিয়ার ইকনোমিক কমিশনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সুবিধা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি সুবিধার নিরিখে সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তিটির নাম হচ্ছে ‘মেমোরেন্ডাম অব কো-অপারেশন বিটুইন দ্য ইউরাশিয়ান ইকোনমিক কমিশন অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল রিপাবলিক অব বাংলাদেশ।’ রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ৩১ মে এই সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এই সমঝোতা স্মারকে ১৮টি খাতে পারস্পরিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বাণিজ্য সুবিধা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা, কৌশলগত নীতি, কাস্টমস নীতি ও প্রক্রিয়া, শাকসবজি রপ্তানির বাধা দূর করতে স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি নির্মূলে সহায়তা, আর্থিক বাজার, যোগাযোগ, জ্বালানি নীতি, কৃষি শিল্প প্রতিযোগিতামূলক নীতি, শিল্প, মেধাস্বত্ব, বাণিজ্য ও সেবা খাতে বিনিয়োগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তি সহায়তা, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া, শ্রম রপ্তানি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ও সমঝোতামূলক খাত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শফিকুল ইসলাম বলেন, এমওইউ করার জন্য ইউরাশিয়ান কমিশনের পক্ষ থেকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই সমঝোতা স্মারকটি ইউরাশিয়ান কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সম্ভাবনাময় নতুন খাতগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি পারস্পরিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া সহায়তা খাতে লেবার মাইগ্রেশন খাতটি অন্তর্ভুক্ত করার ফলে বাংলাদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে শ্রম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এমওইউর খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি মেনে সমতা, স্বচ্ছতা, বিশ্বস্ততা এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারকটি কার্যকর হবে। সূত্র জানায়, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী রাশিয়ান ফেডারেশনের নেতৃত্বাধীন ইকোনমিক কমিশন। কমিশনে রাশিয়া ছাড়াও অন্য সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে বেলারুশ, কাজাখিস্তান, আরমেনিয়া এবং কিরগিজস্তান। বিগত সরকারের আমলে ওই কমিশন বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তির প্রস্তাব দেয়। সরকারের নীতিনির্ধারকরা ইইউসির এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশকে বাণিজ্য সঙ্গী করার লক্ষ্যে এমওইউর খসড়া প্রণয়ন করে মস্কোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠায় ইইউসি। দূতাবাস থেকে প্রস্তাবিত খসড়াটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়ে তা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়ে দেন। ইআরডি এ ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার পর সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করতে খসড়াটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়ায় শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। বর্তমান বাস্তবতায় এখন এককভাবে দেশটিতে ওই সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। বরং রাশিয়াসহ পাঁচ দেশকে নিয়ে গঠিত ইউরাশিয়ান কমিশনের সঙ্গে এমওইউ করলে তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার জন্য সহায়ক হবে। এ কারণে ইইউসির বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ক এমওইউ করার প্রস্তাবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। রাশিয়ার বাজারে তৈরি পোশাক ছাড়াও পাট, হিমায়িত চিংড়ি এবং আলু রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। তবে ফাইটোস্যানিটারি সমস্যার কারণে বর্তমানে দেশটিতে আলু রপ্তানি বন্ধ আছে।