দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ আবার ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে; বড় আমদানি ব্যয় পরিশোধের কারণে কমে যাওয়া মজুদ ছয় কার্যদিবসের মধ্যে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
আমদানি ব্যয় হিসেবে গত ১০ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করায় রিজার্ভ কমে ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছিল; সেদিনের স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
রিজার্ভ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, আকুর দেনা পরিশোধ এবং আরও কিছু অর্থ লেনদেনের ছয় কার্য দিবস পরে রিজার্ভে যুক্ত হয় আরও ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। এতে গত ১৬ মে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।রিজার্ভের এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে বর্তমান আমদানির ধারা অনুযায়ী ছয় মাসের ব্যয় মেটানো যাবে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর দীর্ঘ সময় ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকা বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২০২১ সালের অগাস্টে ৪৮ বিলিয়নের ঘর ছাড়িয়েছিল।
এদিকে চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এসেছে ৮৩ কোটি ৬১ লাখ ডলার। দৈনিক গড় প্রবাহ বিবেচনায় প্রবাসী আয়ের এ ধারা আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে বেশি।
টাকার বিপরীতে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখী ধারা এবং চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকটের মধ্যে সবশেষ আকুর দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসার দিনই টাকার মান ২৫ পয়সা কমানো হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ওই সময় রিজার্ভের উপর কিছুটা চাপ তৈরি হওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর আরও একদফা টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়। গত ১৬ মে টাকার মান আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার আন্তঃব্যাংকে নির্ধারণ করা হয় ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়।
কোভিড মহামারী পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করলে দেশেও ব্যবসা বাণিজ্য গতি পায়। এতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে আমদানি বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় আমদানিকারকদের বেশি ডলার গুনতে হয়। এতে করে দেশের ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকে। এর প্রভাব দেখা যায় নগদ ডলারে কেনাবেচায়।
ব্যাংকের পাশাপাশি ডলারের সরবরাহ সংকট দেখা দেয় খোলা বাজারেও। গত ১৭ মে খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় হার উঠেছিল ১০২ টাকায়। সরবরাহ বাড়ায় পরের দিন অবশ্য কিছুটা কমে ৯৭ টাকায় লেনদেন হয়।
ডলার সংকটকে পুঁজি করে কয়েকটি ব্যাংক নগদে ৯৯ টাকা পর্যন্ত হাতবদল করে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘোষিত হারের চেয়ে সাড়ে ৯টাকা পর্যন্ত বেশি।
এমন প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্সে ভর করে আবার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে যায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে গড়ে ৬ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে আমদানিতে।
এ হিসাবে বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কোরবানির ঈদের সময় এগিয়ে আসলে রেমিটেন্সের ধারা আরও বাড়বে; তখন রিজার্ভের ওপরও চাপ কমবে।রেমিটেন্স সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদন বলছে, “অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব থাকা স্বত্বেও প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর ধারা ইতিবাচক রয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ১২ মে পর্যন্ত গড় হিসাবে দৈনিক রেমিটেন্স এসেছে ৬৯ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার। গত এপ্রিলে দৈনিক গড় রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল ৬৬ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার।
এ ধারা আরও বাড়বে বলে ১৯ মে আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এখন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে কিছুটা… এতে প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাবেন। আর প্রণোদনা দেওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলেই বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।
“ব্যাংকে রেমিটেন্স পাঠানোয় সরকার সুবিধা দেওয়ায় তারা বেশি টাকা পাচ্ছেন আগের চেয়ে। সামনে কোরবানির ঈদ… সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি এ উপলক্ষে রেমিটেন্সের ধারা আরও বেগবান হবে।”