ডেস্ক নিউজ
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে বড় ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে বদলে গেছে আশপাশের এলাকা। বিশাল এই প্রকল্প ঘিরে কর্মরত ৩৩ হাজার কর্মকর্তা ও শ্রমিকের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজারই রুশ নাগরিক। আর দীর্ঘ সময় ধরে প্রকল্পে কর্মরত এই রাশিয়ানদের চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে রূপপুরের নতুনহাট মোড়ের গ্রিন সিটি ১ নম্বর গেটের সামনে গড়ে উঠেছে বিশাল এক রাশিয়ান বাজার।
এই বাজারে দেশীয় পণ্যসামগ্রীর পাশাপাশি রাশিয়ান বিভিন্ন সামগ্রী পাওয়া যায়। এখানে দোকানের সাইনবোর্ডগুলোতে বাংলা-ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষাও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি দীর্ঘদিন বেচাকেনার সম্পর্ক থেকে এখন বাংলাদেশি বিক্রেতারা রাশিয়ান ভাষাও রপ্ত করে নিয়েছেন। আর রাশিয়ানরা শিখেছেন বাংলা। প্রকল্প এলাকার আশপাশের রিকশাচালক পর্যন্ত এখন অনর্গল রুশ ভাষায় কথা বলতে পারেন। সব মিলিয়ে রূপপুর হয়ে উঠেছে ক্ষুদ্র এক রুশপল্লী।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রূপপুরে আইকে রোড নতুনহাট মোড়ে গ্রিন সিটির ১ নম্বর গেটের সামনে বেশ কয়েকটি মার্কেট। এসব মার্কেটের দোকানগুলোতে রুশ নাগরিকদের বোঝার সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়েছে রাশিয়ান ভাষা। জামাকাপড়, কসমেটিকস, ব্যাগ এবং জুতাসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হয় দোকানগুলোতে। খান সুপার মার্কেটের মালিক মো. বেলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাশিয়ান পণ্যগুলোর মধ্যে খাবার জাতীয় পণ্য বেশি বিক্রি হয়। এর মধ্যে আছে মাছ, মাংস, জেলি এবং সুগন্ধি জাতীয় পণ্য। তিনি আরও জানান, কেনাবেচার সুবিধার্থে বাংলাদেশি দোকানিরা যেমন রাশিয়ান ভাষা শিখেছেন, একইভাবে রুশ নাগরিকরাও কিছু কিছু বাংলা ভাষা রপ্ত করে নিয়েছেন। স্থানীয়রাও এসব মার্কেটে আসেন। তবে রুশ ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। আবার অনেক রুশ নাগরিক এখন কেনাকাটার জন্য পাবনা ও রাজশাহীতে যাচ্ছেন। দোকানিরা জানান, দিনব্যাপী কমবেশি বেচাকেনা হলেও বিকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যার দিকে রুশ নাগরিকরা এসব মার্কেটে বেশি যাতায়াত করেন। সাধারণ দোকানপাটের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টও আছে নতুনহাট মোড়ে। এসব রেস্টুরেন্টেরও মূল ক্রেতা রুশ নাগরিকরা। সাধারণ দিনগুলোর পাশাপাশি নিজেদের বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান বা জন্মদিনের পার্টি তারা এই রেস্টুরেন্টগুলোতে উদযাপন করেন। ‘কিউ-বিস্ট্রো প্লাস’ রেস্টুরেন্টের মালিক মো. রাহুল বলেন, রুশ নাগরিকদের কথা চিন্তা করেই আমরা এই রেস্টুরেন্ট দিয়েছি। রুশ স্বাদের খাবার আমাদের এখানে পাওয়া যায়। তারা আমাদের তৈরি খাবার খেতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন খাবারের মধ্যে রাশিয়ানরা ফ্রাইড কালামারি, মমো, সুশি, বিভিন্ন পদের রাইস, রেড সালামি এগসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার বেশি খান। রাহুল আরও জানান, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য রুশ নাগরিকরা রেস্টুরেন্ট বুকিং নেন। রাতভর তারা পার্টি করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার তারা বেশি আসেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক রুশ নাগরিক জানান, বাংলাদেশ তার বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে এখানকার খাবার তিনি খুব পছন্দ করেন। প্রকল্পের কাজ শেষে রাশিয়ায় চলে গেলে তিনি বাংলাদেশকে মিস করবেন। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই একটি আইসক্রিম ও জুসের দোকান। সেখানে বিভিন্ন আইসক্রিমের পাশাপাশি জুসও পাওয়া যায়। দোকানি জানান, রুশ নাগরিকরা আইসক্রিম খেতে বেশ পছন্দ করেন। প্রতিদিন গড়ে ১০০-এর মতো আইসক্রিম বিক্রি হয়। পাশেই একটি ফলের দোকানে রাসেল নামের এক কিশোর ফলমূল ও শাকসবজি বিক্রি করছিল। সে জানায়, রাশিয়ানরা শাকসবজি পছন্দ করে। বিশেষ করে টমেটো তাদের খুব পছন্দের। সে আরও জানায়, আগে খুব একটা দর কষাকষি না করলেও এখন তারা পণ্য ক্রয়ে আগের থেকে সচেতন।
স্থানীয়রা জানান, রূপপুর প্রকল্পকে ঘিরে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি স্থানীয়রা বাজারে দোকানপাট দিয়ে আয় উপার্জন করতে পারছেন। এতে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।