ডেস্ক নিউজ
অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। এই মাসের ২৪ দিনে ১৫৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
অর্থবছরের শেষ ছয় দিনে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার আসলেই বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে।
আর এর উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকও ছুঁতে চলেছে এই অর্থবছরেই।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। প্রতি মাসেই বেশি বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি জুন মাসের ২৪ দিনেই (১ থেকে ২৪ জুন) ১৫৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
আর সব মিলিয়ে ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাস ২৪ দিনে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ২৪ জুন) ২ হাজার ৪৪২ কোটি ৪৬ লাখ (২৪.৪২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
দেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। অর্থবছর শেষ হতে আর ৬ দিন বাকি। এই ৬ দিনে যদি ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে, তাহলেই এবার ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বেশি আসবে।
এমন প্রত্যাশা কিছু দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মাসখানেক আগে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
রোববার তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ‘দেখবেন, আমি যা বলেছিলাম তাই হবে; সত্যিই এবার ২৫ বিলিয়ন ডলার পাব আমরা। এই ৬ দিনে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও বাড়বে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন প্রবাসীরা। তার প্রভাব মাস শেষে দেখা যাবে।’
একই আশার কথা শোনান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সাধারণত দুই ঈদের আগে রেমিট্যান্স বেশি আসে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোরবানির ঈদ। কোরবানির গরু কেনাসহ ঈদের অন্য খরচের জন্য এই মাসের শেষের দিকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘সে হিসাবে অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, এবার রেমিট্যান্স ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াচ্ছে।’
গত মে মাসে ২১৭ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এযাবৎকালে সবচেয়ে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ (২২.৮৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
এই ১১ মাসে গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটা পড়ে। ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
এই বছরের মার্চ মাসে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের মার্চের চেয়ে ৫০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার এসেছিল।
মহামারির মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এক মাসের হিসাবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। কোভিডের আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমলেও এরপর থেকে বাড়ছেই।
গত আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অক্টোবরে এসেছিল ২১১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে আসে ২০৫ কোটি ডলার।
এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে ১৭৮ কোটি ডলারে নেমে আসে। মার্চ মাসে আসে ১৯১ কোটি ডলার। এপ্রিলে এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে দেখা গেছে, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েই চলেছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
গত ২৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। তবে ৪ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
এক মাসেরও কম সময়ে ১ জুন তা ফের ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত তিন সপ্তাহে তা আরও বেড়ে ৪৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এই অর্থবছরেই অর্থাৎ জুন মাসের মধ্যেই রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।