নিউজ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার সরকার। সম্প্রতি নতুন রূপ পেয়েছে দেশটির বাংলাদেশ-বিরোধী এই প্রোপাগান্ডা। চলতি বছরের ১৯ মে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত ২৫তম ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ কিউ টিন্ত সোয়ে।
সরকারের পরোক্ষ মদদে দেশটির সেনাবাহিনীর অকথ্য নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিকে বিলম্বিত করতে এবং ১০ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যূত মানুষদের বাংলাদেশের ঘাড়ে জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতেই মিথ্যাচার করছে মিয়ানমার। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অর্জিত সম্মান ভূলুণ্ঠিত করতে মিয়ানমার সরকার এমন অমূলক-যুক্তিহীন বক্তব্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের দায় এড়িয়ে বিশ্বের সামনে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ চেষ্টা করছে বলেও জানা গেছে।
সম্মেলনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিজ ইচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে গিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করে, পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার (১ পুরুষ, ২ নারী, একজন তরুণী ও এক তরুণ) স্বেচ্ছায় তাদের দেশে ফিরে গিয়েছেন। অথচ এই দুটি দাবিই ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা।
প্রকৃতপক্ষে, ২০০ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনও ঘটনাই ঘটেনি। ৫ জন ফিরে যাওয়ার যে দাবি করা হয়েছে, তদন্তে দেখা গেছে, তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বহুল পরিচিত এজেন্ট। রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে- এমন প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবেই তাদের কৌশলে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আরও দাবি করে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে সাময়িক আশ্রয় নেয়ার মতো পরিবেশ না থাকায় ২০১৮ সালের ২৭ মে ৫৮ রোহিঙ্গা মুসলিম তাদের দেশে ফিরে গিয়েছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, নিজেদের বাড়িঘর ও সম্পত্তির খোঁজ নিতে বাংলাদেশ থেকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে দুই দফায় তারা রাখাইনে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের ৪ বছর কারাদণ্ড দেয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই ৫৮ জনসহ মোট ৬২ জনকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা প্রমাণ করতে নাগা খু ইয়া সেন্টারে নিয়ে তাদের মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদেরও নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অত্যাচারের মুখে তাদের ১০ জন ফের বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। যাদের ছয়জনের সাক্ষাৎকারও নেয় মানবাধিকার সংস্থাটি।
মিয়ানমার আরও দাবি করে, ২০১৮ সালের জুনে ১২ বাংলাদেশি ও ৯২ রোহিঙ্গাসহ ১০৪ জনকে বঙ্গোপসাগরের রাখাইন উপকূল থেকে আটক করা হয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ওই ১০৪ জন মূলত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের ট্রলার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাখাইন রাজ্যের রাথেডং শহরে যাত্রাবিরতি দেয়। ওই ১২ জনকে বাংলাদেশের কাছেও হস্তান্তর করা হয়। আর বাকি ৯২ রোহিঙ্গাকে নাগা খু ইয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি অনুসারে, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর ২০ হিন্দু রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে গিয়েছে, যাদের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরসা অপহরণ করে বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবিরে নিয়ে এসেছিল। সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের সমর্থন পেতে ওই সব হিন্দু রোহিঙ্গাকে গোপনে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কোনও ধরণের যোগাযোগ করেনি। এ কাজে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করে কক্সবাজারের উখিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু নেতা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কালক্ষেপণ করতে এমন সব মিথ্যাচার করছে বলে জানা বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে।