ডেস্ক নিউজ
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যার পর ক্যাম্পে নিরাপত্তার আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে ভয়ভীতি ও শঙ্কা দূর করতে রাত-দিন চালানো হচ্ছে ব্লক রেইড বা চিরুনি অভিযান।
পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য বাড়িয়ে জোরদার করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। এছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে প্রবেশে বাড়ানো হয়েছে প্রচুর কড়াকড়ি।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বলেন, উখিয়ার কুতুপালং এর লম্বাশিয়ার যে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে এখনো কিছুটা ভীতি কাজ করছে। যে কারণে সেখানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। ওই ক্যাম্পে আগে ৭০-৭৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতেন। এখন তা বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আরও জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহর হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ক্যাম্পে ব্লক রেইডসহ দিনে-রাতে ধারাবাহিক অভিযানও চলছে। ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকায় ধারণা করা হচ্ছে মুহিবুল্লাহ হত্যাকারীরা ক্যাম্পের বাইরে পালিয়ে যেতে পারেনি।
সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিনটি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। যেখানে দুই হাজার পুলিশ ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থমথম পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এপিবিএনের আরও দুটি নতুন ব্যাটালিয়ন বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে; যার একটি দায়িত্ব পালন করবে কক্সবাজারে, অন্যটি ভাসানচরে।
ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘ওয়াচ টাওয়ার’ তৈরি হলে নজরদারি রাখা আরও সহজ হবে। কারণ ক্যাম্পের অনেক এলাকার নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাঁটাতার কেটে ছোট ছোট পথ তৈরি করে দুষ্কৃতকারীরা। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে কাঁটাতারের বেষ্টনী পেরিয়ে অনেকে নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার তৈরি হলে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপর নজর রাখা সম্ভব হবে।
এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় এখনো সঠিক ক্লু বের করতে পারেনি মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কিংবা এপিবিএন ছায়া তদন্তের টিম। পাশাপাশি সেলিম ও শওকত নামের যে দুই রোহিঙ্গা যুবক তিন দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে তাদের কাছ থেকেও ঘটনার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি বলে সূত্র জানায়। যে কারণে সব মিলিয়ে এই হত্যাকাণ্ড এখনো ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে।
তবে ১৪ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হকের মতে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড কেন, কী কারণে, কারা করেছে সেই বিষয়গুলো সামনে রেখে সর্বোচ্চ গোয়েন্দা নিয়োগ করে কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ে এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হবে।
কুতুপালং এলাকার ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. হেলাল উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার ক্যাম্পে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের টহল চোখে পড়ার মতো এবং ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে প্রবেশেও কড়াকড়ি বেড়েছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যদি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কোমর ভাঙ্গা না হয় তাহলে ভবিষ্যতের পরিণাম আরও ভয়াবহ হবে। সুতরাং নিরাপত্তা বাড়িয়ে সন্ত্রাস ও মাদক পাচার দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এই পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো- ইস্ট লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আব্দুস সালাম (৩০), ইস্ট কুতুপালং ক্যাম্পের জিয়াউর রহমান (৩২), মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ প্রকাশ কাশ লম্বা সেলিম (৩৩), শওকত উল্লাহ (২৩) এবং ইলিয়াস (৩৫)। এই পাঁচজনের মধ্যে সলিম উল্লাহ প্রকাশ লম্বা সেলিম ও শওকত উল্লাহ পুলিশের তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
ঘটনার সূত্র মতে, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মুহিবুল্লাহকে নিজ অফিসে ৫ রাউন্ড গুলি করে। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় মামলা করেন।