ডেস্ক নিউজ
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে অবিলম্বে জাতিসঙ্ঘকে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
নিউ ইয়র্কে গতকাল বুধবার ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি : সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান। জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্কের স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ যৌথভাবে ভার্চুয়াল এই ইভেন্টের আয়োজন করে। উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির তার সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ইভেন্টটিতে মূল বক্তা ছিলেন ড. মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে আসছি। সমস্যার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেছি। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপত্তার সাথে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছি।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও মানবীয় উদারতার কথা তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, এই নীতি-আদর্শ ও উদারতাই আমাদেরকে সহিংসতার শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের সম্পদ ও স্থানের তীব্র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন সুবিধার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সৃষ্ট নতুন এই থাকার ব্যবস্থা জাতিসঙ্ঘ ও উন্নয়ন সহযোগীরা পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ভাসানচরে তারা মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।
ড. মোমেন বলেন, জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সবসময় আলোচনায় রাখতে অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ ইস্যুতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগে ঘাটতি রয়েছে, যা হতাশাজনক। আমি আশা করি নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসঙ্ঘ সনদ অনুযায়ী তাদের দায়বদ্ধতা অনুযায়ী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীটি তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আঞ্চলিক সংস্থা ও দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ইভেন্টটির সমৃদ্ধ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদূন হাদি সিনির লইয়োগ্লু, গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু নেডিরিটু, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যানড্রিউজ, জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত সৌদি আরবের উপস্থায়ী প্রতিনিধি, রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ও উইমেন পিস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু। প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সায়মন অ্যাডাম।
প্যানেলিস্টরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদারতার প্রশংসা করেন। তারা এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের ওপর জোর দেন, যার শিকড় মিয়ানমারেই নিহিত। প্যানেলিস্টরা মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরূপণের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান। জাতিসঙ্ঘের সদস্যরাষ্ট্র, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনসহ বিপুলসংখ্যক অংশগ্রহণকারী ভার্চুয়াল এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
বিকেলে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকিরের সাথে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনা টিকা নিয়ে আলোচনা হয়। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করার জন্য ভলকান বজকিরকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
করোনা টিকাকে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’ হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবার অধিকার নিশ্চিতে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদকে কাজে লাগানোর অনুরোধ জানান। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য ভলকান বজকিরকে আমন্ত্রণ জানান ড. মোমেন। সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে তার অফিসকে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূমিবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধি ও আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতা মোইলোয়া কাটোয়া উতয়কামানুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর টেকসই উত্তরণ নিয়ে আলোচনা করেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠেয় এলডিসি-৫ কনফারেন্সের প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ সব অংশীজনের সাথে কাজ করে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।