ডেস্ক নিউজ
কাল থেকে দেশব্যাপী ‘লকডাউন’ শুরু হলে এ সময়ে নিম্নআয়ভুক্ত হতদরিদ্র ও গরিবদের পাশে দাঁড়াতে নানা পরিকল্পনা করছেন জনপ্রতিনিধিরা। এরই মধ্যে সরকারের হাইকমান্ড থেকে সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকার অসহায় মানুষদের সহায়তা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর পরই দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অসহায় লোকদের সহায়তা করার নানা ছক করছেন বলে জানিয়েছেন অনেক জনপ্রতিনিধি।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশ। সংকটময় এ সময়ে অসহায় জনগণের পাশে থাকার জন্য জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে এরইমধ্যে সংসদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং খাদ্য সহায়তায় ভূমিকা রাখতে চাচ্ছেন এমপি ও মন্ত্রীরা। যদিও গত বছর সাধারণ ছুটি ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন দেয়ার পর অনেক জনপ্রতিনিধি তাদের নিজ এলাকায় অসহায় মানুষের খোঁজখবর রাখেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। সিংহভাগ এমপি করোনা সংকটে মানুষের পাশে ছিলেন না। বিশেষ করে যারা ব্যবসায়ী বা অন্য পেশা থেকে এসে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তারা করোনার সময়ে নিজ এলাকায় একেবারেই অনুপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত রবিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সব অনুষ্ঠান সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। এর আগে মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছিলেন তেমনভাবে আবার দাঁড়াতে হবে। খাদ্য, মাস্ক, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রীসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করব। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও মানুষের পাশে থাকতে হবে। যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। আমার দেশের একটা মানুষও যেন কষ্টে না থাকে।’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত লকডাউনে নিজ এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। তার নিজ নির্বাচনী এলাকা শরীয়তপুর-২ আসন। নড়িয়া ও সখিপুর উপজেলা এবং ড্যামুডার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকা। এতে রয়েছে মোট ২৫টি ইউনিয়ন। গত বছর করোনার শুরু থেকে অদ্যাবধি নিয়মিত এলাকায় যান তিনি।
করোনার কারণে যখন অনেক এমপি-মন্ত্রী ও নেতারা ঘরবন্দি ছিলেন তখন তিনি মাঠে সক্রিয়। শুধু নির্বাচনী এলাকায়ই নয়, মন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেরিয়েছেন এই উপমন্ত্রী। সোমবার থেকে লকডাউন শুরু হবে- এজন্য এ সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশনা দিতে নিজ এলাকা নড়িয়া ও সুখিপুর গেছেন তিনি। সেখানে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন তিনি। করোনায় মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় সেজন্য ক্ষতিগ্রস্তদের অতীতের মতো পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজনীয় দিকনিদের্শনাও দেবেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণ-মানুষের দল। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের ভোট নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছি। সেই জনগণের পাশে সব সময় থাকতে হবে। গত বছর করোনার শুরু থেকেই মাঠে ছিলাম। শুধু নির্বাচনী এলাকায়ই নয়, সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি। আজ (রবিবার) নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সরকারি কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেব যে, লকডাউনে জনগণের যেন ভোগান্তি না হয়।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের পাশে ছিলাম, মানুষের পাশে থাকব।’
রাজশাহী বিভাগের এক সংসদ সদস্য নাম না করা শর্তে বলেন, ‘এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি গত বারও মানুষের পাশে ছিলাম। এখন আছি। এরই মধ্যে ২০ হাজার মাস্কের অর্ডার দিয়েছি। খাবার ও শুকনা খাবার ক্রয়ের জন্য এলাকা যোগাযোগ করেছি। আমার এলাকার কেউ না খেয়ে থাকবে না।’
আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘করোনা মহামারীতে আর্থিক সহায়তা বা ত্রাণ নিয়ে দলমত নির্বিশেষে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত সকলের। করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে পুরো দেশে লকডাউন হবে। দোকানপাট, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন সব কিছুই বন্ধ থাকবে। শ্রমিক, দিনমজুর ও গরিব মানুষের কাজের কোনো উৎস চালু থাকবে না। এজন্য যারা যা কিছু আছে তা নিয়েই মানুষের পাশে থাকতে হবে। করোনায় সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে খাদ্যদ্রব্য, নগদ অর্থসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।’