ডেস্ক নিউজ
আগামী ২১ মার্চ (সোমবার) দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা উদ্বোধন করবেন তিনি। গতকাল সোমবার বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ‘ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ’ (এফইআরবি) ও ‘নর্থওয়েস্ট পাওয়ার
জেনারেশন কোম্পানি’ (এনডব্লিউপিজিসিএল) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এফইআরবি চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী পরিচালক রিসান নাসরুল্লাহর সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, পিডিবি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিইও খোরশেদুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুতায়ন। দুর্গম চরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। আবার পার্বত্য অঞ্চলের যেসব স্থানে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া দুঃসাধ্য, সেখানে সোলার প্যানেল বসিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছেন।
অনুষ্ঠানে নসরুল হামিদ বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎসহ দেশে এখন সক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরও ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। আগামী ২১ মার্চ শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। বিদ্যুতায়ন এখন ৯৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, এটাকে শতভাগই বলা যায়। সারাদেশে এখন আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।
এক প্রশ্নে জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পার্বত্য এলাকায় গভীর কূপ খনন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেখানে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।
বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি; এটা অনেক বড় বিষয়। সন্দ্বীপ, রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, চরসোনারামপুরসহ প্রায় বেশির ভাগ চর এলাকায় আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছে। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ ভারতও এখনো শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘১৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৩৬ মাসের মধ্য নির্মাণ করা হয়েছে। এটা সম্ভবত বিশে^ সবচেয়ে কম সময়ে স্থাপন করা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।’
প্রধান সঞ্চালন লাইনটি নির্মাণ হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘পায়রা থেকে আরও একটি সঞ্চালন লাইনের রুট করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে খুলনা ও যশোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এতে এই কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।’
কয়লার দাম বাড়ার প্রভাব পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে পড়বে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে খোরশেদুল আলম বলেন, ‘৬৩০০ কিলো ক্যালরি কয়লার দাম বেড়েছে, আমরা কিনছি ৫০০০ কিলো ক্যালরি, যার দাম ১০৫ থেকে ১০৭ ডলার পড়ছে। সে কারণে এখনো সমস্যা দেখছি না।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ‘ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ’ (এফইআরবি)-এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মতবিনিময় সভা করেনে। সেখানে তিনি বলেন, বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি জনসচেতনতা বাড়াতে সাংবাদিকদের অবদান অপরিসীম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ, সঞ্চালন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
এফইআরবির নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির উদ্দেশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহে সরকার কাজ করছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সরবরাহ নেটওয়ার্কের আকারও বড় হচ্ছে, চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত পাশে চাই।’
মতবিনিময় সভায় এফইআরবি চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর, ভাইস চেয়ারম্যান সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, নির্বাহী পরিচালক রিসান নাসরুল্লাহ, পরিচালক (উন্নয়ন ও অর্থ) লুৎফর রহমান কাকন, পরিচালক (বিনোদন ও কল্যাণ) মুজিব মাসুদ, পরিচালক (ডাটা ব্যাংক) মাহবুব রনি, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও গবেষণা) হাসনাইন ইমতিয়াজ, সদস্য অরুণ কর্মকার, আশরাফুল ইসলাম, আজিজুর রহমান ও শাহেদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।