ডেস্ক নিউজ
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারলেও স্কুলে যাওয়া হয়নি। এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও পা রাখা হয়নি ক্যাম্পাসে। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল করোনাভাইরাস মহামারি। বৈশ্বিক এই মহামারির অবসান না হলেও বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের পড়ুয়াদেরও শ্রেণিকক্ষে ফেরার অপেক্ষা শেষ হচ্ছে। আজ রবিবার খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ। এর আগে দুই দফা উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি ওঠে। অবশেষে ৫৪৪ দিন পর খুলে দেওয়া হলো প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার তারিখ আগেই ঘোষণা করা হয় এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাকে স্বাগত জানায় বিভিন্ন মহল। সে অনুযায়ী আজ শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। প্রথম দফায় চলতি বছরের ৩১ মার্চ ও পরে ২৩ মে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলে আসায় তা সম্ভব হয়নি।
যদিও করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত বছরের এপ্রিল থেকেই টেলিভিশনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচার শুরু হয়। এরপর বড় স্কুল-কলেজগুলো এবং পরে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও অনলাইনে ক্লাস শুরু করে। কিন্তু মফস্বল এবং দরিদ্র পরিবারের ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় সব শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারেনি। ফলে বড় ধরনের শিখন ঘাটতি তৈরি হয়। এ অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি ওঠে। যে কারণে করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের ওপরে থাকলেও স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি এলেও খোলা হয়নি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্ত মন্ত্রণালয় বৈঠকে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলায়ও বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে একমত হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার জন্য সরকার শিক্ষার্থীদের টিকাদানে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর চেয়ে কম বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও সেটা বেশি দূর এগোয়নি।
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। আর দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থান প্রথম। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকিও আছে। অনেক দেশই স্কুল খোলার পর সংক্রমণের কারণে পুনরায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুর সাকলায়েন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা স্কুল খুলে দেওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে আমরা চাই আমাদের বাচ্চাদের টিকা নিশ্চিত করতে। যদি তাদের টিকার আওতায় না নিয়ে আসা যায়, তাহলে বড় ধরনের ম্যাসাকারও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল খুলে দেওয়ার পর এক দিনে আড়াই লাখ শিশু আক্রান্ত হয়েছে। এসবও আমাদের ভাবতে হবে।’
এ বিষয়ে সরকারও সতর্ক। সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সরকারের নির্দেশনা : স্কুল-কলেজ খুলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একাধিক নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করা; শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা; প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকরণ ব্রিফিং করা; শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরিধান নিশ্চিত করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা; স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিতকরণ কমিটি করা অন্যতম।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। উপজেলার সব স্কুলে তামপাত্রা মাপার যন্ত্র কেনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে স্কুলে আসতে বলা হয়েছে। যদি কারো মাস্ক না থাকে তাহলে স্কুল থেকে ওই শিক্ষার্থীকে মাস্ক দেওয়া হবে। আমরা এখন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
যেভাবে চলবে ক্লাস : ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহের ছয় দিন ক্লাস করবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শুরুতে সপ্তাহে এক দিন আসবে। নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কোন শ্রেণির কবে ক্লাস তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষই ঠিক করবে। আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শ্রেণির কবে ক্লাস, তা ঠিক করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বন্যাকবলিত জেলা ও উচ্চ মাত্রার করোনা সংক্রমণ এলাকার স্কুল খোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
প্রথম ক্লাসে আসবে অনেক শিক্ষার্থী : করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগেই গত বছরের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। তবে ফল প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হয়। যারা পাস করে তাদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিও আটকে যায়। গত অক্টোবরে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। নভেম্বর থেকে একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু কলেজে ভর্তি হয়েও তারা প্রায় ১০ মাস পর আজ শ্রেণিকক্ষে আসছে।
এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থীই এ বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। আবার অনেকে স্কুল বদল করে অন্য স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও তারা এত দিন স্কুলে আসতে পারেনি। অনলাইনে ক্লাস চললেও তারা এখনো শিক্ষকদের চেনে না, বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হয়নি। তারাও এ সপ্তাহেই প্রথম ক্লাসে আসবে।
গত নভেম্বরে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় পায়েল মজিদ অরণি। সে আজই প্রথম কলেজে যাচ্ছে। সে কালের কণ্ঠকে বলে, ‘এত দিন বাসায় আটকে ছিলাম। পড়ালেখায় মন বসেনি। এখন মনে হচ্ছে সেই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাচ্ছি। বান্ধবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এ ছাড়া অনেক নতুন বান্ধবীও পাব। সব মিলিয়ে আমি খুবই আনন্দিত।’
অরণির ছোট ভাই নাবিল মজিদ অন্তর এ বছর রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। অন্তর কালের কণ্ঠকে বলে, ‘বাবা নতুন ড্রেস কিনে দিয়েছে, জুতো কিনে দিয়েছে। নতুন স্কুলে যেতে আমার খুবই ভালো লাগছে।’
সংক্রমণ বাড়লে ফের বন্ধ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল জামালপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান করলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা কম। এর পরও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকলেও পড়াশোনা বন্ধ ছিল না। টেলিভিশন ও অনলাইনের মাধ্যমে পড়াশোনা চালানো হয়েছে।’ কোনো শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা উপসর্গ থাকলে তাদের বিদ্যালয়ে না পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি।
আটকে আছে দুই পাবলিক পরীক্ষা : প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমান এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার করোনার প্রাদুর্ভাবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি এসএসসির জন্য ৬০ কর্মদিবস ও এইচএসসির জন্য ৮৪ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী ক্লাস করানো সম্ভব হয়নি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কমে আসতে থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মধ্য নভেম্বর থেকে এসএসসি এবং ডিসেম্বরের প্রথমে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শুধু তিনটি ঐচ্ছিক বিষয়ের ছয় পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে। সাবজেক্ট ম্যাপিং করে আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে বাকি বিষয়গুলোর নম্বর দেওয়া হবে।
গত বছরের এইচএসসি ও সমমানে অটো পাস : করোনার কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বর মূল্যায়নের ভিত্তিতে তাদের উত্তীর্ণ করা হয়েছে, যা অনেকটা অটো পাসের মতোই। এতে ৯ হাজার ৬৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণের আবেদন করে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
দেড় বছরে কোনো পরীক্ষাই হয়নি : স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকাকালে কোনো পরীক্ষাই হয়নি। পাবলিক পরীক্ষা না হলেও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে আগ্রহ থাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিশেষ প্রস্তুতিও নেয়। কিন্তু গত বছর এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষা নেওয়াই সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া স্কুলগুলোর প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষাও হয়নি। সব শিক্ষার্থীকেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পেলেও মফস্বল ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পায়নি। তাদের ডিভাইস, ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা রয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখার বাইরে চলে গেছে। টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করলেও তা দেখতে পায়নি অনেকে। আবার এসব ক্লাস মনোযোগও আকর্ষণ করতে পারেনি। ফলে বড় রকমের শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। যেহেতু এ বছরেরও আট মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, তাই এই শিখন ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর হয়ে পড়বে।
বন্ধ ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন, লাখো শিক্ষকের পেশা বদল : কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সরকারি কোনো অনুদান নেই। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতেই চলে এসব স্কুলের বাড়িভাড়া, শিক্ষকদের বেতনসহ নানা খরচ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর এসব স্কুলও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আর্থিক অনটনে বাড়িভাড়া দিতে না পারায় অনেক কিন্ডারগার্টেনই গুটিয়ে গেছে। এসব স্কুলের অনেকগুলোই আর খুলবে না। স্কুল উঠে যাওয়ার পর কোনো কোনো ভবন মেস, গোডাউন বা ফ্ল্যাট হিসেবে ভাড়া হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে অনেক শিক্ষক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন, যাঁদের কেউ কেউ আর এ পেশায় ফিরতে পারবেন না। অনেক শিক্ষক সবজি বিক্রি, দোকানের কর্মচারী, নানা ধরনের হকারি ব্যবসা করে জীবনধারণের উপায় খুঁজে নিয়েছেন। অনেকে গ্রামে ফিরে গেছেন।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্য মতে, দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার, যেগুলোর অর্ধেকই করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ স্কুল ছেড়ে দিয়ে দু-এক রুমের বাসায় মালপত্র রেখে অপেক্ষা করছে। তবে ২০ শতাংশ বা প্রায় ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল আর খুলবেই না।
বেতন পাননি ৮ লাখ বেসরকারি শিক্ষক : দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। যেহেতু এসব স্কুলে টিউশন ফি বন্ধ, তাই তাঁরা গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন পান না। এ ছাড়া দেশের সাত-আট হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীও দেড় বছর বেতন পান না। যদিও সরকার তাঁদের দুই দফায় প্রণোদনা দিয়েছেন। প্রতিবার শিক্ষকদের পাঁচ হাজার ও কর্মচারীদের আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। অনেক স্কুলেই খণ্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারী রাখা হয়। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদেরও বাদ দেয় কর্তৃপক্ষ, যাঁদের সংখ্যা লক্ষাধিক। সব মিলিয়ে বেসরকারি আট লাখ শিক্ষক-কর্মচারী গত দেড় বছরে দুর্দশার মধ্যে আছেন।