আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া থেকে:
সময়ের স্রোতে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তেমনি নাটোরের সিংড়া ও চলনবিলের আত্রাই, নন্দকুঁজা ও গুমানীসহ ১৬টি নদ-নদীতে পানি শুকিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর দেখা গেলেও বর্ষা শেষে আর থাকে না। দখল, দূষণ আর ভরাটের কারণে সংকুচিত হওয়ায় মরে যাচ্ছে চলনবিলের নদীগুলো। পানির অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষি জমির সেচ কার্য্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশী মৎস্য সম্পদ জীব-বৈচিত্র হুমকির মুখে। নদীকে জীবিকা করে খাওয়া মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্থবিরতা নেমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবে গুরুদাসপুর উপজেলার সাবগাড়ী এলাকায় একটি রাবারডাম স্থাপনের কারণে নদীর কয়েক কি.মি জুড়ে এখনও পানি রয়েছে। আর এক মাস পরে রাবারডাম নামিয়ে দিলে সে পানিও থাকবেনা। এদিকে সিংড়া উপজেলার মৎস্য অভয়ারন্য হিসেবে পরিচিত দহ এলাকায় সারাবছর থাকে অল্প পরিমাণে পানি।
এক সময় নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বানিজ্যকেন্দ্র বিভিন্ন হাটবাজারে নদী পথের সঙ্গে ও সহজলভ্য অপেক্ষাকৃত কম ঝুকিপুর্ণ নৌ যোগাযোগে ব্যবসা বানিজ্য চলতো। নানা কারণে অস্তিত্ব সংকটে থাকা নন্দকুজা ও আত্রাই নদী সৌন্দর্য্য, পূর্ব জৌলুশ ও স্বকীয়তা হারিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। জলপথে পণ্য পরিবহণে খরচ কম হলেও বর্তমান সময়ে এলাকার সব জলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিক খরচে ব্যবসায়ীদের স্থলপথে পণ্য পরিবহণ করতে হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মোঃ রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ২৯ বছর আগেও চলনবিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে বছর জুড়েই ৬-১২ ফুট পানি থাকত। ফলে বছর জুড়েই নৌ চলাচল করতো। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী ভরাট হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর ২২২১/২ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রবেশ করে ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট পলি বর্ষায় চলনবিলে ত্যাগ করে। অবশিষ্ট ২৬৯১/২ মিলিয়ন ঘনফুট পলি নদ-নদীসহ চলনবিলে স্থিতি থাকে। অথচ এক সময় এসব নদীতে বছর জুড়েই পানি থাকতো। নদীতে চলাচল করতো ছোট বড় নৌকা। নদী আর নৌকাকে ঘিরে চলনবিলের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নাজিরপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুর, তাড়াশের ধামাইচ, নাদো সৈয়দপুর, চাটমোহরের ছাইকোলা, অষ্টমনিষা, মির্জাপুর ভাঙ্গুড়ায় গড়ে উঠেছিল বড় নৌ বন্দর। চলত রমরমা ব্যবসা-বানিজ্য। কালের আবর্তমানে সেসব এখন শুধুই ইতিহাস।
সিংড়া বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ীরা জানান, তারা এক সময় নৌকায় করে শত শত মন ধান, পাট, গম সরিষাসহ চলনবিলের সকল কৃষিজাত পণ্য ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যেত। আবার সেসব মোকাম থেকে নানা পণ্য এখানে এনে পাইকারি দামে বিক্রি করতো। কম খরচে সহজ লভ্য পরিবহণ সুবিধা ভোগ করলেও এখন আর ওই সুবিধা তারা পাননা। এখন বছরের ৩/৪ মাস (বর্ষাকালে) কোন রকমে তারা নৌকায় পণ্য আনা নেওয়া করে থাকেন। ফলে আগের মত ব্যবসায়ীরা আর ব্যবসা করতে পারেন না।