ডেস্ক নিউজ
শুল্ক্ক কমিয়ে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর চিন্তা করছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও পেট্রোবাংলাকে নিয়ে শুল্ক্ক কতটা কমানো যেতে পারে, তা পর্যালোচনা করছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। শিগগিরই জ্বালানি বিভাগ থেকে শুল্ক্ক কমানোর প্রস্তাব অর্থ বিভাগের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠানো হবে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এরই মধ্যে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের মধ্যেও মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। একটি অংশ মনে করে, দাম একবারে এতটা বাড়ানো ঠিক হয়নি। খোদ অর্থ মন্ত্রণালয়ও এত বেশিহারে দাম বাড়ানোর পক্ষে ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম কমানোর চিন্তা চলছে। এ জন্য একাধিক বিকল্প রেখে এগোচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে শুল্ক্ক কমানো এবং বিশ্ববাজার পরিস্থিতি অন্যতম। কারণ, সম্প্রতি বিশ্ববাজারে দাম কমে এসেছে। যদিও কম দামের তেল এখন পর্যন্ত কেনেনি সরকার। দাম কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে এবং বিপিসি কিনতে সক্ষম হলে শুল্ক্ক না কমিয়েও দাম কমানো হতে পারে। আর তেলের দাম না কমলে শুল্ক্ক কমিয়ে লাগাম টানা হতে পারে। জানা গেছে, জ্বালানি তেলে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৭ শতাংশ কর দিতে হয়। জ্বালানি বিভাগের এক হিসাবে, বর্তমানে ১১৪ টাকা প্রতি লিটার ডিজেলের মধ্যে ১৬ টাকা ১৪ পয়সা ভ্যাট পরিশোধ করছেন ক্রেতারা। আয়কর বাবদ প্রতি লিটারে আরও ১৮ টাকা কর দিতে হয়। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের রাজস্ব চাহিদা রয়েছে। সব ক্ষেত্রে ছাড় দিতে গেলে রাজস্ব সংগ্রহ কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের অন্যান্য ব্যয়ের ওপর চাপ তৈরি হবে। এ জন্য ভ্যাট ও আয়করের যে কোনো একটি থেকে জনগণকে অব্যাহতি দিলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা হলেও কমবে।
জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আয়কর ও ভ্যাট পুনর্নির্ধারণে গত ৩ আগস্ট বিপিসি ও পেট্রোবাংলার সঙ্গে সভা করে জ্বালানি বিভাগ। সভায় ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের আয়কর এবং ভ্যাট দ্রুত পুনর্নির্ধারণে সিদ্ধান্ত হয়। যদিও ৫ আগস্ট দাম বাড়ানো হয়েছে। এর পরও কাজ থেমে নেই। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে আয়কর ও ভ্যাটের নতুন হার ঠিক করা হয়েছে। শিগগিরই পুনর্নির্ধারিত হার কার্যকরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনবিআরকে অনুরোধ করা হবে।
যদিও গত বছর সেপ্টেম্বরে জ্বালানি বিভাগ আয়কর ও ভ্যাট পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব দিলেও গ্রহণ করেনি এনবিআর। গত বছর ব্যবসায়ী থেকে গ্রাহক পর্যায় পর্যন্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রতি লিটার ডিজেলে গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ টাকা ৯০ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ টাকা ২৪ পয়সা। ওই সময় আয়কর ও ভ্যাট শতাংশের পরিবর্তে নির্দিষ্ট করার প্রস্তাব করে জ্বালানি বিভাগ। কারণ, জ্বালানি তেলের দাম সব সময় ওঠানামা করে। দাম বাড়লে আয়কর ও ভ্যাট বাবদ খরচ বেড়ে যায়। এবারও একই ধরনের প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে বেশি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও আমদানি খরচ কমছে না। সরকার বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখতে চাচ্ছে। যে কারণে জ্বালানি তেলের দাম কমানো বা কর ও শুল্ক্ক হার পুনর্নির্ধারণ- সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর।
গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, জ্বালানি তেল থেকে আয়কর ও ভ্যাট কমানো বা প্রত্যাহার সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়। এখানে এনবিআরের কোনো ভূমিকা নেই।