ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। গতকাল বিকালে দুই নেতা টেলিফোনে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ নেপালকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন সার দেবে বলে কে পি শর্মাকে জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বিকাল ৫টার দিকে দুই সরকারপ্রধান টেলিফোনে কথা বলেন। তারা কুশল বিনিময় করেন। একে অন্যের দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানান। দুই দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
নিয়ম মেনে কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : জলাশয় রক্ষায় নিয়মমাফিক প্রয়োজন অনুযায়ী কালভার্ট নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। এদিকে একনেকে ৬ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা খরচে ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ২ হাজার ৭১ কোটি ১০ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ৪ হাজার ৫৯৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত থেকে একনেক সভায় অংশ নেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জলাশয় বা জলমগ্ন এলাকায় যেসব সড়কের কাজ করা হবে, সেখানে অনেক বেশি কালভার্ট রাখতে হবে। প্রাকৃতিক কিছু খাল আছে, সেসব খাল তো রাখবই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাড়তি বা কিছু দূর পর পর একটি করে কালভার্ট করবেন। পানি যাতে অবাধে চলাচল করতে পারে। মাছ অবাধে চলাফেরা করতে পারে। জলজ প্রাণীর স্বাধীনতা আমরা সম্মান করি। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ওই এলাকায় (হাওর অঞ্চলের) যেসব গাছগাছালি আছে, হিজল তমাল এসব রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য যা আছে, প্রাণিজ জলজ বৃক্ষ রক্ষা করতে হবে। জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকায় ছোট ছোট চিংড়ি মাছ রয়েছে এগুলোও রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেকে ৬৬২৯ কোটি টাকার ৬ প্রকল্প অনুমোদন : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৬ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা খরচে ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। মন্ত্রী বলেন, ডিএনডি দ্বিতীয় পর্যায়সহ মোট ৬ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ের ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে একনেক বৈঠকে। এই বিপুল ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৭১ কোটি ১০ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। আর বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে আসবে ৪ হাজার ৫৯৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
চার লেন হচ্ছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক : আমদানি-রপ্তানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেন করা হচ্ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পর্যায়ক্রমে আন্তজেলাসহ সব মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। এর অংশ হিসেবেই সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেন করা হচ্ছে।
মতলব-মেঘনা-ধনাগোদা-বেড়িবাঁধ সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ৭৪১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সারা দেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। বরেন্দ্র এলাকার আট জেলা বাদে দেশের ৫৬ জেলায় পুকুর ও খাল পুনঃখনন করতে ১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ব্যবহারের উপযোগী করার পাশাপাশি পুকুর-খালে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির মজুদ বাড়ানো, শুকনো মৌসুমে পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) এ প্রকল্প। ১ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পুকুর ও খাল পুনঃখনন প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় তিন বছর আগে। কিন্তু প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে কোনো সমীক্ষা না করায় এর অগ্রগতি হতাশাজনক। তিন বছরে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার খাল ও ছয় একর পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় এখন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৪২৩ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সিলেট-তামাবিল সড়ক চার লেনে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এই সড়ক উন্নয়নে অর্থায়ন করবে। সড়কে মোট প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ থেকে ২ হাজার ৯৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
ডিএনডি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ল ৭৪১ কোটি টাকা : ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা (ডিএনডি) এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের ব্যয় ৭৪১ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথম দফা অনুমোদনের সময় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৫৮ কোটি টাকা। সংশোধনের ফলে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে হলো প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ধারণাগত নকশার পরিবর্তে মাঠ পর্যায়ে জরিপের ভিত্তিতে ভৌত কাজের বিস্তারিত কার্মোপযোগী নকশা প্রণয়নের ফলে ডিএনডি দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্থায়ী ক্যাম্পের আবাসন ও অফিস নির্মাণ, নিষ্কাশন, খালের বর্জ্য অপসারণ, খালের সীমানা পিলার নির্মাণ এবং উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনের মতো নতুন কিছু ভৌত কাজ যোগ হওয়ার কারণেও ব্যয় বেড়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রায় ২০ লাখ মানুষের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘব এবং দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিশ্চিত করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, ডিএনডি এলাকায় প্রায় ১৮৮ কিলোমিটার খালের সীমানা পিলার স্থাপন করার পাশাপাশি প্রায় ৯৪ কিলোমিটার খাল নিষ্কাশন ও বর্জ্য অপসারণ করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। এ ছাড়া ৪৪ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। পুনঃখননের মাটি দিয়ে ৯৪ কিলোমিটার খালের তীর উন্নয়ন করা হবে। অতিরিক্ত সংযোগ খাল পুনঃখনন করা হবে ৩২ হাজার ৫০০ ঘন মিটার, প্রায় ৯৪ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনঃখনন এবং ৫২টি সেতু ও কালভার্ট মেরামত করা হবে।