ডেস্ক নিউজ
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না। গত অর্থবছরে সুদ-আসল বাবদ সরকারকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এটা একটা বিশাল অংক; বাজেট থেকে সুদ-আসল বাবদ এতো টাকা চলে গেলে অন্য কাজ কীভাবে হবে।’
সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এ খাত থেকে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। গত বছরের জুলাইয়ে নিয়েছিল ৩ হাজার ৭০৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
এ হিসাবে এই এক মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
আর এতে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা লাঘবের পথ মসৃণ হলো বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জায়েদ বখত।
তিনি বলেছেন, মুনাফার হার কমানোয় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ আগামী দিনগুলোতে আরও কমবে। স্বস্তিতে থাকবে সরকার।
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না। গত অর্থবছরে সুদ-আসল বাবদ সরকারকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এটা একটা বিশাল অংক; বাজেট থেকে সুদ-আসল বাবদ এতো টাকা চলে গেলে অন্য কাজ কীভাবে হবে।’
‘তাই আমি মনে করি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে সরকার ঠিক কাজটিই করেছে। এখন বিক্রি কমে আসবে; সরকারকে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হবে না
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পার হয়ে গেলেও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ের সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই মাসে সবমিলিয়ে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের মোট নিট বিক্রির পরিমাণ ৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৮ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকার সুদ বা মুনাফা গুণতে হবে এখন সরকারকে।
গত অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র থেকে গত অর্থবছরে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ৩ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।
কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় তিন গুণ।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এরমধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে; ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি ৪৮ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদের কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেতো, এখনও সেই হারে পাওয়া যাবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৩ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।