নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জব্দকৃত গুড় নষ্ট করার জন্য উপজেলা চত্বরে নিয়ে আসলে তা নষ্ট না করে প্রশাসনের কর্মচারী ও স্থানিয় সাংবাদিকের ভাগ করে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সপ্তাহ পেরোলেও নিরব প্রশাসন। এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তদন্ত করে দোসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক।
জানাযায়, গত ১৯ মার্চ রোববার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুরাইয়া মমতাজ পাকা ইউনিয়নের চকতকিনগর এলাকায় গুড় ব্যবসায়ী রতন আলী ও মোশারোফ হোসেন নামে দুই জনের ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১৯ মণ দানা গুড় জব্দ করে। পরে তা নষ্ট করার জন্য বাগাতিপাড়া উপজেলা চত্বরে নিয়ে আসে। সহকারী কমিশনানের সামনে কিছু গুড় নষ্ট করা হলেও তিনি চলে যাবার পর সেসব গুড় প্রশাসনের কর্মচারী জাহাঙ্গীর, রফিকুল ইসলাম রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকরা ভাগ করে নেন। তখন গ্রাম পুলিশরা আপত্তি জানালে তাদেরও সেই গুড়ের ভাগ দেয়া হয়। তখন গ্রাম পুলিশরা সেই গুড় ভ্যান যোগে তাদের এলাকায় নিয়ে যেতে লাগলে পথের মধ্যে গুড় মালিকরা তাদের জব্দকৃত গুড়ের টিন ভ্যানে দেখতে পেয়ে সন্দেহ হলে ভ্যানটি থামায়। ভ্যান চালকের কাছ থেকে গুড় কোথায় নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে উৎসুক জনতা ভীড় জমায়। এসময় বাগাতিপাড়া মডেল থানা পুলিশ এলাকায় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্যানসহ গুড়ের টিন আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে অফিসের কর্মচারী ও স্থানীয় সাংবাদিকরা তাদের ভাগের গুড় বাসায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এবিষয়ে আটককৃত ভ্যানচালক মাহাবুর রহমান বলেন, ওই দিন গুড় জব্দ করে আমার ভ্যানে করে উপজেলায় আনা হয়। কিছু সময় পর উপজেলা থেকে কিছু গুড় আবার আমাকে গ্রামপুলিশ হেলালের বাড়িতে নিয়ে যেতে বললে। আমি ভ্যান যোগে নিয়ে যাবার সময় রাস্তায় পেরাবাড়িয়া এলাকায় গুড়ের মালিক পরিচয় দিয়ে থামতে বলে। পরে পুলিশ এসে গুড়সহ আমাকে সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে যায়। রাত আটটার দিকে থানা থেকে গুড়ের টিন সহকারী কমিশনারের গাড়িতে তুলে দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি।
নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া সত্বে গুড় ব্যবসায়িরা বলেন, নষ্ট গুড় বলে তারা গুড় জব্দ ও জরিমানা করলো। তাহলে অফিসের লোকজন সেই নষ্ট গুড় কেন বাড়ি নিয়ে গেল। আমার খুব খারাপ লেগেছে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, থানা পুলিশ ভ্যানচালকসহ ভ্যান ও গুড় থানায় নিয়ে আসলে কিছু সময়ের মধ্যেই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) গাড়ি এসে সেই গুড় নিয়ে যান।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুরাইয়া মমতাজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিয়ম মেনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। জব্দকৃত গুড় গুলো নষ্ট করতে শুরু করার পর কিভাবে ভাগাভাগি হলো তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকারের সরকারী মোবাইল ফোনে এঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুড় জব্দ করে নিয়ম মেনেই নষ্ট করা হয়েছে। তবে গুড় ভাগাভাগির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি তার কার্যালয়ে গিয়ে তথ্য নিতে বলেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ভ্রাম্যমান আদালতে জব্দকৃত মালামাল নষ্ট হলে তা অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে। বাগাতিপাড়ায় জব্দকৃত গুড় নষ্ট না করে কেউ ভাগাভাগি করে নিলে তা অবশ্যই অপরাধ। তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।