ডেস্ক নিউজ
দেশে কর্মরত সব বিদেশী নাগরিক নিজ দেশে অর্থ পাঠাতে নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে শর্তসাপেক্ষে শতভাগ নিট আয় দেশে নিতে পারবেন। তবে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আয়ের ৮০ শতাংশ নিতে পারবেন বছরের যে কোনো সময়ে। আর বাকি ২০ শতাংশ আয় করের প্রত্যয়ন নিয়ে বছরে একবার দেশে পাঠানো যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল সোমবার এমনই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ব্যাংক নির্বাহীদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সুসংহত রাখতে আগে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সহজেই পাঠাতে পারতেন না বিদেশী নাগরিকরা। বাধ্যতামূলকভাবে তাদের আয়ের একটি অংশ ব্যয় করতে হতো। একই সাথে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জিত মুনাফা দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে অর্থ পাঠাতে অনুমোদন দেয়া হতো। কিন্তু গত বছর দেড়েক ধরে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সহজ ও বিনিয়োগ বাড়ানোর নামে বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা সহজ করা হচ্ছে।
সবশেষ গতকাল বিভিন্ন দূতাবাস, কোম্পানিতে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের অর্জিত আয় দেশে পাঠানোর নীতিমালা শিথিল করা হলো। আগে বিদেশী নাগরিকরা তাদের অর্জিত বেতন ভাতার ৭৫ শতাংশ দেশে পাঠাতে পারতেন। বাকি ২৫ শতাংশ পাঠানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ছিল। বলা ছিল কোনো বিদেশী নাগরিক একবারে নিজ দেশে ফিরে গেলে সেই ক্ষেত্রে তাদের অর্জিত আয় দেশে নিতে পারবেন। কিন্তু গতকাল তা শিথিল করে বছরের যে কোনো সময় নিট বেতন ভাতার ৮০ শতাংশ নিজ দেশে পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সাথে আয়কর রিটার্নের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বছরে একবার বাকি ২০ শতাংশ আয়ও দেশে পাঠাতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো নাগরিকের জীবন যাপনে অর্থ ব্যয় হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের কারণে ঘোষণাকৃত বেতনের পুরো আয় দেশে পাঠালে তারা জীপন-যাপনের অর্থ কিভাবে সংস্থান করবে সে প্রশ্ন থেকে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাহলে তারা কি কর ফাঁকি দেয়ার জন্য নিট আয় কম দেখায়- এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ওঠে।
এর আগে বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা শিথিল করে বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই দেশীয় ব্যাংক থেকে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। বিদেশী মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো। এর কারণ হিসেবে, দেশে কার্যত বিদেশী কোম্পানিগুলো স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়ে মুনাফা করে আবার বৈদেশিক মুদ্রায় মুনাফা বিদেশে নিয়ে যায়। অথচ অনুমোদন না দিলে বিদেশী মুদ্রায় মূলধন এনে থাকে কোম্পানিগুলো। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়ে যেতো।
অপর দিকে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিলে ওই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলে ওই কোম্পানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার দায় সৃষ্টি হয়। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ উভয় দিক থেকে দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ কারণে কোনো বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানি স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নেয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার আগে তা যাচাই-বাছাই করত। কোনো কোম্পানির সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হতো না। কিন্তু নীতিমালা শিথিল করায় তার আর প্রয়োজন হচ্ছে না। গত বছরের ২১ জুলাই এই নীতি শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছেমাফিক স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে শুধু তাদের প্রধান কোম্পানির লেনদেনকৃত ব্যাংকের গ্যারান্টি আনতে হবে। ওই গ্যারান্টিপত্র জামানত হিসেবে রেখে স্থানীয় যে কোনো ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ঋণ দিতে পারবে।
আগে বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের অর্জিত মুনাফা দেশে পাঠানোর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। মুনাফা দেশে নেয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই-বাছাই করতো। কেউ ভুয়া মুনাফার ভিত্তিতে লভ্যাংশ যাতে নিজ দেশে নিতে না পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করতো। কিন্তু এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতিমালা শিথিল করে দেয়। তখন বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই মুনাফা দেশে নিতে পারবে। তবে তার প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি ভুয়া মুনাফার ভিত্তিতে ডিভিডেন্ড দেশে নিয়ে গেলে তা যাচাই-বাছাই করা হতো। যাচাই বাছাইয়ে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে মুনাফা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হতো। না হয়, পরের বছরের মুনাফার সাথে তা সমন্বয় করা হতো। এ যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষমতাও এর আগে হারায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশে বলা হয়, এখন কোনো বিদেশী কোম্পানি মুনাফা নেয়ার পর আর তা যাচাই-বাছাই করা হবে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পৃথক দু’টি সার্কুলার জারি করা হয়।