ডেস্ক নিউজ
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বন্দর মোংলা পোর্টে পণ্য দ্রুত ওঠানামাসহ সব ধরনের সুবিধা বাড়তে যাচ্ছে। পোর্টের সক্ষমতা বাড়াতে চলছে আপগ্রেডেশনের কাজ। ‘আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের মধ্যে এসব উন্নয়নের কাজ শেষ হওয়ার কথা। সম্প্রতি মোংলা বন্দর ঘুরে এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজ শেষ হলে বাড়বে পোর্টের সক্ষমতা। গতি বাড়বে কাজে।
বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের এলওসি-৩-এর অর্থায়নে চলছে এই কাজ। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষে হলে মোংলা বন্দরের রাজস্ব বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। আর কাস্টমস এবং অন্যান্য সংস্থার রাজস্ব বাড়বে বছরে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল (২২০০ মিটার), কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড (৯৪ হাজার বর্গ মিটার), সিকিউরিটি সিস্টেমসহ সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ (তিন কিলোমিটার), সার্ভিস ভেসেল জেটি (২২ হাজার বর্গমিটার), আটটি জলযান সংগ্রহ, বন্দর আবাসিক কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি সুবিধাসম্পন্ন ১৩ তলা ভবন, বন্দর ভবন সম্প্রসারণ কাজ।
এছাড়াও, মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ (৩৫০০ বর্গমিটার), যন্ত্রপাতিসহ স্লিপওয়ে ও মেরিন ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্স নির্মাণ, দিগরাজে রেলক্রসিং ওভারপাস (শূন্য দশমিক ৪০ কিলোমিটার), মোংলা বন্দরের ভেতরের রাস্তা ছয় লেন পর্যন্ত সম্প্রসারণ, ১০ হাজার গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কারইয়ার্ড।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশলী ও উন্নয়ন) এবং আপগ্রেডেশন অব মোংলা পোর্ট প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব ইমতিয়াজ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। পরে যখন কাজ শুরু হয়, প্রপার ওয়েতে খুব ভালোভাবে কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সর্বশেষ একজন কনসালটেন্ট নিয়োগের জন্য নেগোসিয়েশন করা হয়। সেই কনসালটেন্ট ফার্মের বিড ছিল ১৫৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তবে আমাদের এস্টিমেট ছিল ৮২ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেই ফার্মের দাবি ছিল অনেক বেশি। আমরা মিটিং করে নেগোসিয়েশন করেছি। শেষে ৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার মধ্যে আমরা কনসালটেন্সি ফার্মের ফি নির্ধারণে সক্ষম হয়েছি।
মোংলা পোর্ট কর্তৃপক্ষের প্রধান পরিকল্পনাবিদ জহিরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উন্নয়নের কাজ শেষ হলে জেটি হ্যান্ডেলিং বেড়ে যাবে। পোর্টের আধুনিকায়ন হয়ে গেলে সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। এখন ২০ হাজার গাড়ি রাখার সক্ষমতা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরও ১০ হাজার গাড়ি রাখা যাবে। পোর্টে নিরাপত্তা অনেক বাড়বে। নিজস্ব জাহাজগুলোর মেরামত নিজেরাই করতে পারবো। মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ ফ্যাসিলিটিজ তৈরি হলে এর সুবিধা পাবে নিজস্ব জাহাজগুলো। এতে খরচ অনেক কমবে। সব ধরনের সক্ষমতা বাড়বে। এর পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও অনেকাংশে বাড়বে।
যেসব সক্ষমতা বাড়বে
বছরে বাড়তি প্রায় ১৮০টি জাহাজ হ্যান্ডেল করা যাবে। জাহাজের টার্ম অ্যারাউন্ড টাইম হ্রাস পাবে। পোর্টের সংরক্ষিত এলাকা বাড়বে। আরও ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন মালামাল হ্যান্ডেলিং করা যাবে। চার লাখ টিইইউএস (টোয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা যাবে। বাড়বে ১০ হাজার গাড়ি হ্যান্ডেলিং করার সক্ষমতা।
সাড়ে ছয় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসন সুবিধা তৈরি হবে। মেরিন ও মেকানিক্যাল মেরামত সুবিধাও বাড়বে।
তবে সবচেয়ে বড় দুটি বিষয় হলো, মোংলা বন্দরের রাজস্ব বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। কাস্টমস এবং অন্যান্য সংস্থার রাজস্ব আয় বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পের অগ্রগতি
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট (পিএমসি) নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর আরএফপি ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি দাখিল করা আরএফপি ডকুমেন্ট উন্মুক্ত করা হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি কারিগরি মূল্যায়ন এবং ১৪ মার্চ আর্থিক মূল্যায়ন শেষ হয়। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টের সঙ্গে ৫ এপ্রিল নেগোসিয়েশন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং নেগোসিয়েশন সভার কার্যবিবরণী এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াতে মিটিংয়ের জন্য ২৮ জুলাই পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং নেগোসিয়েশনের কার্যবিবরণী ইতিবাচক হওয়ায় ২ আগস্ট মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ১১ আগস্ট পাঠানো হয়েছে।