ডেস্ক নিউজ
২০১১ সালে সম্মত খসড়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ভারতের দেয়া প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছে। আমরা চাই দ্রুতই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হোক। এ ছাড়া গোমতি, খোয়াই, ফেনী, কুশিয়ারা, মহুরির মতো অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের চুক্তিও হওয়া প্রয়োজন।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর স্থিতিশীলতার জন্য নিরাপত্তা সহযোগিতা বর্তমানে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। সংলাপের বিষয়বস্তু ছিল ‘বাংলাদেশ ও ভারতের অংশীদারিত্বের ৫০ বছর : পরবর্তী ৫০ বছরের দিকে যাত্রা’। ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিস (আরআইএস) সংলাপ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, কানেক্টিভিটি, নিরাপত্তা, সন্ত্রাসদমনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক বিস্তৃত। এ ছাড়া সমুদ্র অর্থনীতি, মহাকাশ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, ইন্টারনেট সংযোগ প্রভৃতি নতুন নতুন ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক সম্প্রসারিত হচ্ছে
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একাধারে জটিল, স্পর্শকাতর ও বহুমুখী। ঐতিহাসিক বন্ধনের কারণে এই ভূকৌশলগত সম্পর্ক কেবল দুই দেশের সরকারই নয় বরং তা ব্যক্তি পর্যায়েও প্রভাব ফেলে। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সাথে রয়েছে সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত, যা চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। এটি বিশ্বের কোনো দুই দেশের মধ্যে পঞ্চম দীর্ঘতম সীমান্ত। তিনি বলেন, হিমালয় থেকে উৎপত্তি হওয়া তিনটি বৃহৎ নদীর পানি বাংলাদেশ ও ভারত ভাগাভাগি করে নেয়। এগুলো হলো গঙ্গা, ব্রহ্মহ্মপুত্র ও মেঘনা। ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টনে ঐতিহাসিক চুক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেই সই হয়েছিল।
যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না উল্লেখ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ১৯৭২ সালের মার্চে জেআরসি গঠিত হয়েছিল মূলত বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। কিন্তু এখন খরা, নদীভাঙন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো ইস্যুগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর এ জন্য পানি সম্পদের অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রীয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় তিনটি অর্জন হচ্ছে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই, ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় জমি হস্তান্তর এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস দমন। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সমতার দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি। বাণিজ্য ও পানি সম্পদ নিয়ে অনিষ্পন্ন ইস্যু, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি সংক্রান্ত চলমান ইস্যু এবং প্রযুক্তি খাতে সহায়তার ভবিষ্যৎ ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আগামী ৫০ বছরের সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ ও ভারতে মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর তৈরি করা রূপরেখা ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে ভারত। আগামী ৫০ বছরে এই সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত হবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংক্রান্ত কৌশলসহ অন্য ইস্যুগুলো এই সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে। তবে দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে যাবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ওপর। আর শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়, আমলাতন্ত্রও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল, যা এখন ‘সোনালি অধ্যায়’ অতিক্রম করছে। উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে তরুণ প্রজন্ম মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারতের অবদান সম্পর্কে তারা আগের চেয়ে ভালোভাবে অবগত হয়েছে। তবে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য স্বার্থান্বেষী মহলের তৎপরতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, আরআইএসের মহাপরিচালক সচিন চক্রবর্তী, ভারতের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি শ্রী রাখা দত্ত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।