ডেস্ক নিউজ
করোনা মহামারির চোখ রাঙানি, বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে এগিয়ে চলছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ। চলতি বছরের মে পর্যন্ত থার্ড টার্মিনালের কাজ হয়েছে ৩৬ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ এগিয়ে থাকা এ প্রকল্পের কাজ সময়ের আগেই শেষ হওয়ার আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
গত মাসে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, ‘কভিড আগ্রাসনে সারা বিশ্ব যখন থমকে ছিল তখন এক দিনের জন্যেও বন্ধ হয়নি থার্ড টার্মিনালের কাজ। ২০২৩ সালের জুনে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে। তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগের কাজ শুরুর অনুমতি পেতে দেরি হওয়ায় উদ্বোধনের সময় পেছাতে পারে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মধ্যে আমরা এ টার্মিনাল উদ্বোধন করতে পারব বলে আশাবাদী।’
থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের ৩ হাজারের বেশি পিলার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে গত বছরই। এখন এগুলোর ওপর তৈরি হচ্ছে টার্মিনালের অবকাঠামো। এ কারণে বিমানবন্দরসংলগ্ন সড়ক থেকেও দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের অগ্রগতি। তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন হলে এ বিমানবন্দরের রানওয়েতে আসবে অনেক উড়োজাহাজ। বিমানবন্দরে রানওয়ে একটি। তাই উড়োজাহাজ রানওয়েতে থাকার স্থায়িত্ব যাতে কম হয়, দ্রুততার সঙ্গে যেন তা পার্ক করতে পারে এজন্য দুটি অতিরিক্ত হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ের নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা ছিল জুনের মধ্যে এ কাজ শেষ করার। কিন্তু এ কাজটি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই শেষ হয়ে এসেছে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
৮ ঘণ্টা করে দুই শিফটে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা টানা কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। করোনা মহামারি থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। প্রকল্প এলাকাতেই শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু শ্রমিক আক্রান্ত হলেও নিয়মিত চিকিৎসায় এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন তারা। ফলে কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। করোনার থাবায় অনেক প্রকল্প পিছিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এ মেগা প্রকল্পের কাজ। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভিতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। নির্মাণাধীন টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর লাগানো হবে। যারা বিমানবন্দরের ভিতরে দীর্ঘ পথ হাঁটতে পারবেন না তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোয় বেশি যাত্রীপ্রবাহের জায়গায় এ এসকেলেটর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের একটি শান্ত ও মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে করে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকার যে কোনো স্টেশন থেকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরের বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে।
টার্মিনালটির প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে বেবি কেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভিতর মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে। এ ছাড়া শিশুদের খেলার জন্য স্লিপার-দোলনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। হেলথ ইন্সপেকশন সুবিধা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট-এইড রুম, নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া থাকবে। টার্মিনালের ভিতরের ভবনটির নকশা তৈরি করছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং ঋণ হিসেবে জাপানের জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় পর্যাপ্তসংখ্যক এসকেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হয়েছে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কারপার্ক। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হবে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।