ডেস্ক নিউজ
ভোলার মনপুরা ঘাট থেকে মাছ ধরার জন্য সাগরের দিকে যাত্রা শুরু করেন নাসির উদ্দিন মাঝি। ট্রলারজুড়ে লাল নীল বাতি। যাতে রাতের বেলায় দূর থেকে অন্য ট্রলার দেখতে পায় তার অবস্থান। এই বাতির বিদ্যুৎ আসছে ট্রলারে থাকা সোলার প্যানেল থেকেই। স্মার্টফোনে খবরও পড়েন তিনি। মাঝেমধ্যে ব্যবসায়িক-পার্টনারসহ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। সন্তানরা পড়ছে কিনা সেটা রীতিমতো তদারকি করেন ভিডিও কলে!
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে মনুপরা ঘাটে কথা হয় তার। বলেন, ‘এক সময় পরিবার থেকে কয়েক সপ্তাহের জন্য বিদায় নিয়ে সাগরে যেতাম। কখন কোন বিপদ আসে বলা যেতো না। সাগর উত্তাল দেখলে বাড়ির মানুষ থাকতো উদ্বিগ্ন। এখন আগের দিন নেই। প্রতি মুহূর্তেই বাড়িতে কথা হচ্ছে। আবার মাছ ধরে সাগরেই বিক্রি করে দিচ্ছি। ঢাকার আড়তদাররা ছবি ও ওজন দেখে মাছের দাম পাঠিয়ে দিচ্ছেন মোবাইল ওয়ালেটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় রাত হলে অন্ধকারেই থাকতাম। হারিকেন আর ফানুস জ্বালিয়ে বসে থাকতে হতো। সামান্য বাতাসে এগুলো নিভে যেতো। এখন সেই ভয় নেই। রাত হলেই সৌরবাতি জ্বলে। প্রত্যেক নৌকায় সোলার প্যানেল আছে। মোবাইল চার্জ থেকে শুরু করে সবই করতে পারছি।’
শুধু নাসির নন, উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ জেলেই এখন ডিজিটাল। রাতে তাদের ট্রলার আলোকিত থাকে সৌরবাতিতে। চার্জ হয় স্মার্টফোনেও।
শহরের মানুষের পাশপাশি দুর্গম উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের মাঝেও সরকারের ডিজিটালাইজেশনের হাওয়া লেগেছে। মাছ ধরতে বাড়িঘর ছেড়ে অনেক সময় একমাসও সাগরে থাকতে হয় তাদের। তখন ট্রলারে বসেই মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে পারছেন, ব্যবহার করতে পারছেন ইন্টারনেট। আবার ট্রলারে বসেই ঢাকাসহ বিদেশের বাজারের মাছের দাম জানতে পারছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অনন্য উদাহরণএকসময় আকাশের তারা আর কম্পাস দেখে দিক ঠিক করতে হতো জেলেদের। এখন স্মার্ট ফোনে রীতিমতো মানচিত্র দেখতে পান। দুর্যোগ আসন্ন থাকলে সতর্ক সংকেত জানতে পারছেন সঙ্গে সঙ্গেই। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন কমিউনিটি রেডিওসহ বহাওয়ার খবরও পাচ্ছেন ফোনে। এতে সমুদ্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আগের চেয়ে প্রাণহানির ঘটনা অনেক কমে এসেছে অনেক।
উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, বড়ধরনের নৌযানগুলোতে একসময় জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। তাতে খরচ পড়তো বেশি। এখন সোলার প্যানেলে দিনরাত বিদ্যুতের সুবিধা পেলেও লাগছে না কোনও জ্বালানি।
সোলার বিদ্যুতের কারণে অনেকটাই সহজ হয়েছে দ্বীপাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রাদুর্যোগকালীন জেলেদের সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সম্পন্ন কমিউনিটি রেডিও স্থাপন করেছে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা। এর নাম রেডিও সাগর দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকাজুড়ে এর নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। অতোদূর আবার মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না। সেখানে এই রেডিওই তাদের ভরসা।
দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রফিকুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার এলাকা আমাদের নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। মোবাইল ফোনে জেলেরা প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর জানতে পারছে।’
জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় তথ্য অফিসের পরিচালক জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্রলারে বসেই ঢাকার মাছের বাজারের খোঁজ নিচ্ছেন তারা। সাগর পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সম্পন্ন টাওয়ার রয়েছে। কমিউনিটি রেডিওগুলোও কাজ করছে বেশ।’