সাতক্ষীরার তালায় দলীয় পদ না পেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে রিয়াদ হোসেন বাবু (২৫) নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি তালা উপজেলার হরিসচন্দ্রকাটি গ্রামের শেখ মঞ্জুরুল রহমানের ছেলে। ফেসবুকে ত্যাড়া মুন্সী বাবু নামে পরিচিত তিনি। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি বিষপান করে আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে।
ওই পোস্টে রিয়াদ লেখেন, ‘নিজের কাছেই অবাক লাগছে। আজ এক সপ্তাহ হলো…, বিষের বোতলটা আমার বালিশের নিচে পড়ে আছে স্পষ্ট দেখতে পারছি। সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। ছোট ভাইটা পাগলপ্রায়। জানি ছোট বোনটা খুব কাঁদছে। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি হয়তো! এমনটা তো হবার কথা ছিল না। জানেন, সেদিন খুব কেঁদেছিলাম আমি। যেদিন আমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলেন সোহাগ দাদা। আমার বাঁচার শেষ আশাটুকু ছিলেন উনি। অঝোরে কেঁদেছি সারা রাত এই কদিন। প্রতি রাতে বালিশ ভিজিয়েছি চোখের জলে। একটিবারও খোঁজ নাওনি কেমন ছিলাম আমি। আর, দোস্ত তোদের অনেক ধন্যবাদ। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করেছিস। তবে কি জানিস, বাস্তবে এতটা সময় তোরা যদি দিতি… তাহলে, না থাক কিছু না, জানি তোমরা খুব কাঁদছো। জানি খুব ভালোবাসতে আমাকে, হয়তো ঘৃণাও করতে অনেকে। যদি আর একটু খোঁজ করতে, আমার সমস্যাগুলো শুনতে… যদি আমার দিকে আর একটু খেয়াল রাখতে… যদি সবকিছু নির্ভয়ে বলতে পারতাম তোমাদের… তাহলে আজ হয়তো… ছোট বোন, কাঁদিস না লক্ষীটি। হয়তো সব থেকে বড় অন্যায়টা তোর সঙ্গে হলো! মাফ করে দিস তোর এই অপরাধী ভাইটিকে।’
পোস্টে রিয়াদ আরও লিখেন, ‘ক্ষমা করে দেবেন বাজে ছেলেটাকে। আমি নাকি খারাপ, হুম মানলাম। বাট হয়তো এমন কাউকে পাবেন না, যে প্রমাণ করতে পারবে আমি খারাপ। কারণ আমি আজ অবধি এমন কোনও কাজ করিনি, যে প্রমাণ করতে পারবেন। ছোটবেলা থেকে আমার রক্তে মিশে আছে রাজনীতি। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তার দেখানো পথেই চলে আসছি।’
পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ‘চাকরি বা বিয়ে কোনোটাই করিনি ছাত্রলীগ করবো বলে। বাট আজ দলও টাকার কাছে জিম্মি। আমার জীবনে আর কী বাকি আছে, হয়তো বেঁচে থাকতাম দু’মুঠো ভাতের জন্যে। কিন্তু যখন অসহায় মানুষগুলো কাঁদে, আমি তাদের কান্না সহ্য করতে পারি না। আমার নেতা বঙ্গবন্ধুও পারেননি। তাইতো সে নিজের জীবন দিছে তবুও হার মানেনি, লড়াই করে গেছে অন্যায় এর বিপক্ষে সারা জীবন। আমিও অন্যায় কে প্রশ্রয় দিতে পারিনি তাই আমি খারাপ।’
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘জীবনের শেষ সময়ে, কেন জানি মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের নেশাটাই আমাকে শেষ করে দিলো। হারিয়েছি সব, ঘর, পরিবার, ভালোবাসার মানুষ, কাছের মানুষ। সবকিছু হারিয়েছি রাজনীতির জন্যে। তাই চলে গেলাম এই নিষ্ঠুর স্বার্থের পৃথিবী থেকে, ক্ষমা করে দেবেন আমাকে।’
নিহতের চাচা শেখ মেজবাহুর বলেন, কী কারণে সে আত্মহত্যা করছে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সাদী বলেন, উপজেলা কমিটি মাত্র দুই সদস্যের, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। সাতক্ষীরা জেলা কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় উপজেলা কমিটি সেভাবেই আছে। আমরা সম্প্রতি কোনও কমিটিও দেইনি। সে কারণে টাকা লেনদেনের কোনও প্রশ্নই আসে না। রিয়াদ উপজেলা ছাত্রলীগের আগের কমিটিতে ছিল, কিন্তু কোন পদে ছিল, বলতে পারবো না। আমার কমিটি আসার পর তাকে ছাত্রলীগে সক্রিয় দেখা যায়নি। তবে সে কেন এ ধরনের স্ট্যাটাস দিলো, বিষয়টি বুঝতে পারছি না।
এ ঘটনায় তালা থানার ওসি মেহেদী রাসেল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ধারণা করছি, সে পারিবারিক কলহের জের ধরেই আত্মহত্যা করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।