ডেস্ক নিউজ
মজুদ পর্যাপ্ত
কৃত্রিম সঙ্কট রোধে তদারকি জোরদার ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত
দেশের অনেক জায়গায় সার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা লাইন ধরেও অনেক জায়গায় সার পাচ্ছেন না। কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে এমন খবরে নড়েচড়ে বসেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এই মুহূর্তে সারের কোনো সঙ্কট বা ঘাটতি নেই। কেউ যাতে সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে ও দাম বেশি নিতে না পারে সে বিষয়ে তদারকি জোরদার এবং নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কৃষি সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম এই নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত সার মজুদ রয়েছে, কোথাও সারের সঙ্কট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে ভার্চুয়ালি ‘সার্বিক সার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ সভায় কৃষিসচিব এ নির্দেশনা প্রদান করেন। সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বিএডিসির চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, সারা দেশের জেলা-উপজেলাসহ মাঠপর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন। সভায় প্রতিটি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালকরা সারের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
সভায় সঠিকভাবে সার বিতরণ ও বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন কৃষি সচিব। ডিলাররা যেন বরাদ্দকৃত সার যথাসময়ে উত্তোলন করে তা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মনিটরিং জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়।
অনেক ডিলার বরাদ্দকৃত সার যথাসময়ে উত্তোলন না করে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে রেশনিং পদ্ধতিতে বিক্রি করছে। এর ফলে মাঠপর্যায়ে কৃষকের মধ্যে এক ধরনের কৃত্রিম সঙ্কটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। কোনো ডিলার যেন নিয়মবহির্ভূতভাবে সার বিক্রিতে রেশনিং না করতে পারেন, সে জন্য ডিলারদের সতর্ক করাসহ তদারকি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভায়। এ ছাড়া রশিদ ছাড়া যেন সার বিক্রি না হয় তা নিশ্চিত করা; ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দোকানে লালসালুতে বা ডিজিটালি সারের মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখা হয় তা নিশ্চিত করা; ডিলারের গুদাম ভিজিট করে সারের অ্যারাইভাল নিশ্চিত করা; জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে কৃষি বিভাগ নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা এবং নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা; অধিক মূল্যে সার বিক্রির কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া গেলে সাথে সাথেই তা রিপোর্ট করা এবং সংশ্লিষ্ট ডিলারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সার্বিক বিষয়াদি নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিলারদের নিয়ে সভা করে কৃষক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ সবাইকে সারের পর্যাপ্ততা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
সভায় জানানো হয়, চাহিদার বিপরীতে দেশে সব রকমের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ইউরিয়া সারের মজুদ ছয় লাখ ৪৯ হাজার টন, টিএসপি তিন লাখ ৯৪ হাজার টন, ডিএপি সাত লাখ ৩৬ হাজার টন, এমওপি দুই লাখ ৭৩ হাজার টন। সারের বর্তমান মজুদের বিপরীতে আমন মৌসুমে (আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) সারের চাহিদা হলো ইউরিয়া ছয় লাখ ১৯ হাজার টন, টিএসপি এক লাখ ১৯ হাজার টন, ডিএপি দুই লাখ ২৫ হাজার টন, এমওপি এক লাখ ৩৭ হাজার টন।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও সারের বর্তমান মজুদ বেশি। বিগত বছরে এই সময়ে ইউরিয়া সারের মজুদ ছিল ছয় লাখ ছয় হাজার টন, টিএসপি দুই লাখ ২৭ হাজার টন, ডিএপি পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার টন এবং এমওপি এক লাখ ৯৬ হাজার টন।