ডেস্ক নিউজ
ঢাকা মহানগরবাসীকে সার্বক্ষণিক নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং ঢাকা ওয়াসার সেবার মান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার সাতটি জোন এলাকায় সব পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুনর্বাসন, শক্তিশালীকরণ ও ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী, বস্তিবাসীসহ নগরবাসীর জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নন-রেভিনিউ ওয়াটারের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনবে সরকার।
মামুন-আল-রশীদ বলেন, এ লক্ষ্যে চলমান ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব আনা হবে। মূল প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩ হাজার ১৮২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ফলে নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে ৫৯৭ কোটি টাকাসহ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে দুই বছর।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
মামুন-আল-রশীদ বলেন, প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো ঢাকা মহানগরীতে টেকসই, নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ সুবিধা দেওয়া। উচ্চ ঘনত্বের পলিথিনের পাইপ ও ট্রেঞ্চলেস (রাস্তা না কেটে) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার ১ হাজার ৬৭৮ কিলোমিটার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুনর্বাসন ও শক্তিশালী করা হবে। ৮৩টি ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া প্রতিষ্ঠা, ডিএমএ এলাকাসমূহে প্রেসারাইজড সিস্টেমে সার্বক্ষণিক নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, নন-রেভিনিউ ওয়াটারের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনা হবে। এর মধ্যদিয়ে স্বল্পআয়ের জনগোষ্ঠী, বস্তিবাসীসহ পুরো নগরবাসীর জন্য নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকায় পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক পুনর্বাসন, শক্তিশালীকরণ ও নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নানা কারণে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় কমানো: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত সমজাতীয় পূর্ববর্তী প্রকল্প ঢাকা ওয়াসা ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অতিরিক্ত ফান্ড মূল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরে অর্থের প্রয়োজন না হওয়ায় প্রকৃত প্রয়োজন অনুসারে এ খাতের ব্যয় কমানো হয়েছে।
যানবাহন খাতে ব্যয় কমানো: যানবাহন কেনা বাবদ ব্যয় চুক্তিমূল্য অনুসারে সংশোধিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা মূল প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে কম।
নানা খাতে ব্যয় কমানো: ওয়াটার সাপ্লাই মাস্টার প্ল্যান অনুসারে ঢাকা ওয়াসার লক্ষ্য হচ্ছে ঢাকা শহরে ১৪৫টি ডিএমএ বাস্তবায়ন করা। এরই মধ্যে ৬৩টি ডিস্ট্রিক্ট মিটার্ড এরিয়া (ডিএমএ) বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে বাস্তবায়িত ডিএমএসমূহে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিএমএগুলোকে টেকসই করা। অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রতি ছয়টি ডিএমএ এর জন্য একজন ডিএমএ ম্যানেজার, প্রতি দুটি ডিএমএ এর জন্য একজন ডেপুটি ম্যানেজার এবং প্রতি একটি ডিএমএ এর জন্য দুজন ফিল্ড স্টাফ প্রয়োজন। ফলে ৬৩টি ডিএমএ টেকসইকল্পে ১১ জন ম্যানেজার, ৩২ জন ডেপুটি ম্যানেজার এবং ১২৬ জন ফিল্ড স্টাফ আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রকৃত প্রয়োজনের নিরিখে ব্যয় কম হয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির কারণে প্রশাসনিক ব্যয় (অফিসার ও স্টাফদের বেতন, অফিস অপারেশন ইত্যাদি) বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি এবং ডিএমএ ম্যানেজমেন্ট টুলস সিবিএস পরামর্শকের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে ডিএমএ ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পানির গুণগতমান পর্যবেক্ষণ। এসব খাতেও ব্যয় বাড়বে। খাবার পানির মান পর্যবেক্ষণ একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা এবং গ্রাহকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানির গুণগতমান পর্যবেক্ষণ দুই ধাপে বাস্তবায়ন হবে।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের কিছু কিছু খাতের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি মোতাবেক ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের আওতায় মোট ব্যয় আন্তঃখাত সমন্বয় করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬৭৮ কিলোমিটার পানির বিতরণ লাইন, সাড়ে ৭ হাজার স্মার্টমিটার কেনা হবে। ৫০০টি ক্লোরিনেটর, ২০০টি মোটরযান, ৪০০টি ইলেবট্রোম্যাগনেকি ফ্লো মিটার, পানির মিটার, বাল্ক মিটার, ভাল্ব, ডাটা লগার কেনা হবে। বস্তিবাসী ও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে পানি দিতে বাড়তি জনবলও নিয়োগ দেওয়া হবে। মূলত এসব কারণেই প্রকল্পের ব্যয়-সময় বাড়ছে।