ডেস্ক নিউজ
সেপ্টেম্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী সংলাপ শেষ করেই রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু করছে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে সিইসির কাছে জমা দেওয়া ইসি সচিবালয়ের খসড়া রোডম্যাপ আবারও নতুন করে কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনাররা নিজেরাই এসব কাজ করছেন।
ইসিসূত্র জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী রোডম্যাপের খসড়া প্রকাশের পর তা নিয়ে আবারও অক্টোবরে রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে সংলাপ বা ওয়ার্কশপ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সেই নির্বাচনী রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে। এবারের রোডম্যাপে অগ্রাধিকার হচ্ছে নির্বাচনী আইন সংস্কার, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কার্যকর পন্থা, কত আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হবে এবং ইভিএমে পেপার ট্রেইল তথা ভোটার ভেরিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) যুক্ত করা হবে কি না সে বিষয়টি। এ ছাড়া সংসদীয় আসনের সীমনা নির্ধারণের কাজ আগামী বছর জুনের মধ্যে এবং রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কাজ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করার টার্গেট থাকবে নির্বাচনী রোডম্যাপে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে ‘রোডম্যাপ’ প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১৭ থেকে ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সংলাপে প্রাপ্ত সুপারিশ খসড়া রোডম্যাপে স্থান পাচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই বর্তমান ইসি কিছু কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগস্টের মধ্যে দল নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম আগামী জানুয়ারির মধ্যে শুরু করার চিন্তা করছে সংস্থাটি। আর শেষ করার টার্গেট রাখা হচ্ছে জুনের মধ্যে।
২৬ মে ইসি নতুন দলের নিবন্ধন আহ্বান-সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ইসিতে দল নিবন্ধনের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আগামী বছর জুলাইয়ের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন-সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে চায় সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতি সহজ করা হচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। এ ক্ষেত্রে চলতি বছর সেপ্টেম্বরে রোডম্যাপ ঘোষণা হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির হাতে ১৫ মাস সময় থাকবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের পর ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শপথ নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের বিশিষ্টজন ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা নতুন কমিশনের কাছে নানা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। তারা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ইতোমধ্যে সংলাপ শেষ করেছে।
রোডম্যাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি। সেই আলোচনার পর্যালোচনা করে আমরা রোডম্যাপ তৈরি করব। এ রোডম্যাপের খসড়া তৈরিতে মাসখানেক লাগতে পারে। আশা করি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি রোডম্যাপের খসড়া প্রকাশ করতে পারব। তবে আগস্টের মধ্যে রোডম্যাপ তৈরির কাজ শেষ করতে পারলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তা প্রকাশ করতে পারি। এরপর রোডম্যাপ নিয়ে আমরা আবারও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে মতামত নেওয়ার চেষ্টা করব। তখন হয়তো আলাদাভাবে ডাকা হবে না। একটা ওয়ার্কশপে মতামত নেওয়া হতে পারে। সেখানে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারকে ডাকা হবে।’ তিনি বলেন, ‘রোডম্যপে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ থাকবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে কী কী কাজ করতে হবে তা-ও ঠিক করা থাকবে। আবার কোন কাজে কী চ্যালেঞ্জ আছে তা শনাক্ত করা হবে। আর চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করে তা মোকাবিলার পন্থা নির্ধারণ করা হবে।’
সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে এ প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা রোডম্যাপ যখন উন্মুক্ত করব, সেখানে ইভিএম বিষয়ে পরিষ্কার বলা থাকবে। রোডম্যাপে ইভিএমে কী ধরনের সংস্কার করা সম্ভব তা বলে দেওয়া থাকবে। এ ক্ষেত্রে কোন ইভিএম ব্যবহার হবে, কতগুলো ইভিএম ব্যবহার করা হবে সবকিছু নির্বাচনী পরিকল্পনায় পরিষ্কার বলা থাকবে। আসলে ইভিএমে ভিভিপিএটি লাগানো হবে কি হবে না তা নির্বাচনী পরিকল্পনায় থাকবে। যদি লাগানো সম্ভব না হয় তবে লেখা থাকবে কেন লাগানো সম্ভব নয়।’ এক মাসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো, আমরা নির্বাচনী পরিকল্পনা তথা রোডম্যাপ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব। মতামত সংগ্রহ করব। এরপর আলোচনা করে নির্বাচনী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করব।’ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের কথা বলা হয়েছে। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।