ডেস্ক নিউজ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে- যাদের বলা হয় ‘সেভেন সিস্টার্স’- বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ রাজ্যগুলোয় সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশি পণ্যের বাজারের অপার সম্ভাবনা। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তীসহ অন্যান্য রাজ্যগুলোতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশি পণ্যের ‘হাব’ এ রূপান্তরিত হবে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো। এ অঞ্চলের বাণিজ্য প্রসারিত হলে উপকৃত হবে বাংলাদেশ এবং ভারতের সাত রাজ্যের নাগরিকরা।
সেভেন সিস্টার্সের বাণিজ্য নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ প্রটোকল অনুযায়ী কাজ করবে আসাম। প্রতিবেশী অঞ্চল হিসেবে পারস্পরিক কল্যাণমুখী সম্পর্কের অংশ হিসেবে অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। উত্তর-পূর্ব অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে দুই দেশই উপকৃত হবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যেই ঢাকা-গুয়াহাটি সরাসরি বিমান চলাচল করবে। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে।’
গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর বলেন, ‘সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশি পণ্যের ভালো চাহিদা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রাসারণ করতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে।’
সহকারী হাইকমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে এ অঞ্চলে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৬৭৫০ দশমিক ৬৭ লাখ টাকার। একই সময়ে এ অঞ্চল থেকে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করেছে ৩৯০৩৯ দশমিক ৬৬ লাখ টাকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪০৬৪ দশমিক ৮৯ লাখ এবং আমদানি করেছে ৪৭২৯০ দশমিক ৪০ লাখ টাকার পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১৮৪৩৪ দশমিক ৩৫ লাখ টাকার পণ্য, আমদানি করেছে ৯০৪৪১ দশমিক ০২ লাখ টাকার পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১০৩২০ দশমিক ৬৬ লাখ টাকার পণ্য, আমদানি করেছে ১০১১৩০ দশমিক ৬ লাখ টাকার পণ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি করেছে ৬২১৫ দশমিক ৬২ লাখ টাকার পণ্য এবং আমদানি করেছে ১৩১১৩০ দশমিক ৬ লাখ টাকার পণ্য।
জানা যায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার’ হলো আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, আসাম এবং মেঘালয়ের কিছু কিছু এলাকায় বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্য রাজ্যগুলোতেও পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এসব রাজ্যে চাহিদা থাকা বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- তৈরি পোশাক, লোহা, সিমেন্ট, টিন, ইলিশ, শুঁটকি, জুস, চিপস, কনফেকশনারি আইটেম, কটন, প্লাস্টিক ফুটওয়্যার, স্যান্ডেল, প্লাস্টিক টেবিল, কিচেন ওয়্যার, জামদানি শাড়ি, কাঁচা পাট, মিনারেল ওয়াটার, চানাচুর, সস, মোটর ডাল, আইসক্রিম, ইমারজেন্সি লাইট, কনডেন্সড মিল্ক ইত্যাদি। পাশাপাশি এসব রাজ্যের কিছু উৎপাদিত পণ্যেরও বাংলাদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশে যেসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কয়লা, আদা, পিঁয়াজ, ড্রাই চিলি, পোলট্রি ফিড, ডিম, কাপড়, চিনি, অটো পার্টস, বিভিন্ন ফল, প্রকৌশল পণ্য, টিউবলাইট ইত্যাদি। এ ছাড়া আসামের চিনি, তুলা, চা, চুন, পেট্রোলিয়াম পণ্য, লোহা, বিভিন্ন পাথর। মনিপুরের তেল, বিভিন্ন বীজ, সরিষা, ধান, চিনি, গম, চুনাপাথর ও ক্রোমেট। মেঘালয়ের কয়লা, কাচ, চীনামাটি, আকরিক। অরুণাচলের ভুট্টা, গম, সরিষা, চিনি, ডাল, আপেল, কমলা, আঙুর, কয়লা, চুন, পেট্রোলিয়াম পণ্য, পাথরের অন্যতম বাজার হতে পারে বাংলাদেশ।