পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথা চিন্তা করে নবায়নযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ, এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ভাঙ্গনামারি গ্রামে ১৭৪ একর জমির ওপর সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৮ হাজার মাউন্টিং পাইলস স্থাপন করা হয়েছে। ১ লাখ ৭৩ হাজার সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্যানেল থেকে ৩৩২টি ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেওয়াটখালী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মাধ্যমে আগামী তিন মাসের মধ্যেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশাবাদী প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের মোট বিদ্যুৎ উন্নয়ন খাতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথা সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে, যা মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধোধন করবেন। তার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। আমার জানা মতে এখনো তারিখ ঠিক হয়নি।
এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক গ্রুপের ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ মো. শফিকুল ইসলাম পিএসসি ইনকিলাবকে বলেন, দেশে চলমান সৌর বিদু্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় প্রকল্প। সরকারের সব নিয়মনীতি অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হইয়েছে করোনা মহামারি না থাকলে আরও ৬ মাস আগেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কার শুরু হতো। আশা করছি শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে সরকারের বার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের সুতিয়াখালীতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে প্রায় আটশত কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলাধীন সুতিয়াখালীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে দেশের সর্ববৃহৎ ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৮৫% কাজ শেষ। প্রকল্পের তদারকিতে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছরের জুন মাসে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের যৌথ প্রতিষ্ঠান এইচডিএফসি সিনপাওয়ার লি. প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রকল্প থেকে উৎপাদিত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালীর জাতীয় গ্রিডে। প্রকল্প স্থান থেকে জাতীয় গ্রিডের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। তবে ৫ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন এর ১ কিলোমিটার যাবে টাওয়ারের মাধ্যমে। বাকি ৪ কিলোমিটার যাবে মাটির নিচ দিয়ে। ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রকল্প স্থানে স্থানীয় প্রকৌশলীদের সাথে যুক্ত আছেন বিদেশি প্রকৌশলীরাও। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে প্রকল্পের মাধ্যমে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রকল্পটির কারণে সুতিয়াখালীর ঐ এলাকায় আর্থ সামাজিক পরিবর্তনেরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজম্যান্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই) সরকারি বিভিন্ন সেক্টরের ৩২ জন প্রকৌশলী কর্মকর্তাদের সরেজমিনে অন জব প্রশিক্ষণের জন্য সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট এর বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য সয়েল টেস্ট ইরেক্টরস অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইসুজ অব সোলার পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম বিষয়ে সম্যক ধারণা প্রদান করা হয়।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক মির্জা আল মামুন ইনকিলাবকে বলেন, সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৮ হাজার মাউন্টিং পাইলস স্থাপন করা হয়েছে। ১ লাখ ৭৩ হাজার সোলার প্যানেল আছে। এসব প্যানেল থেকে ৩৩২টি ইনভার্টারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে এক কিলোমিটার তার টানা হয়েছে। বাকি চার কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ সঞ্চালন লাইন।
প্রকল্প পরিচালক ও ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (দক্ষিণ) নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্রজিৎ দেবনাথ বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের অধীনে অফিস ভবন, নদীশাসন বাঁধ, সোলার প্লেট বসানো, ১০টি বক্স ট্রান্সমিশনে সংযোগ স্থাপন, সাবস্টেশনসহ ১৩২ কেভিএ ট্রান্সমিশন টাওয়ার নির্মাণ, জাতীয় গ্রিড লাইন পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন ইকুইপমেন্ট টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের পর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।