ডেস্ক নিউজ
স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করার দৃপ্ত শপথে রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ৫১ বছর পূর্তি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়েছে। তবে প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় বক্তব্য করা হয়।
দেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঐতিহাসিক এ দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননেও জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচী পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে সরকারী ছুটি ঘোষণার দাবি উঠেছে। ভোরে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয়সহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মেহেরপুরের সরকারীভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সবাই এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা আরও শক্তিশালী করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বিজয় সুসংহত করাই আজকের দিনের অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ স্বাধীন-সার্বভৌম প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের স্মৃতিবিজড়িত মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরেও সরকারীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
মেহেরপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, এর আগে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে মুজিবনগর দিবসের কার্যক্রম। রবিবার সকাল ১০টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ। এরপর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিজিবি, পুলিশ বাহিনী, আনসার ও ভিডিপি, বিএনসিসি, স্কাউট, গার্লস গাইডদের প্রদত্ত গার্ড অব অনার ও কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন তারা। পরে শেখ হাসিনা মঞ্চে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় অংশ নেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। পরে জল মাটি ও মানুষ নামের গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসক ড. মনসুর আলম খান, পুলিশ সুপার রাফিউল আলমসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা কর্মচারীসহ এলাকাবাসী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
বক্তারা স্বাধীনতাবিরোধী, দেশবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক সকল অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।