করোনা মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতিতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি অংশ চাইছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি কোনোভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়, তাতেই মঙ্গল। আবার এমন অভিভাবকও কম নয়, যারা ঝুঁকির মধ্যে সন্তানকে পরীক্ষা হলে পাঠাতে রাজি নন।
আশিক নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক মনোয়ার হোসাইন জানান, তার সন্তানের দুশ্চিন্তা দেখে মনে হয়, পরীক্ষা হয়ে গেলে সে মুক্তি পাবে। আবার করোনার ভয়ে তিনি ভাবেন, আগে সন্তানের বেঁচে থাকা। পরে অন্য সবকিছু।
তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফজর আলী বলেন, বিশেষ ব্যবস্থায় কেন্দ্র সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ করে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। করোনার বর্তমান এ পরিস্থিতিতে কেউ ঘরে বসে নেই। অফিস আদালত খোলা, বাস ও লঞ্চ স্টেশন চালু, ব্যাংক-বীমা বাজার-ঘাটও খোলা। বন্ধ শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত তার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখনো পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে শিক্ষা বোর্ডগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ‘জেড’ আকৃতিতে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে পরীক্ষা নিলে কতগুলো শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন হতে পারে সে ব্যাপারে কাজ করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
এতে একটি কক্ষে প্রথম বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী বসলে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসবে একজন। এজন্য প্রতিটি কেন্দ্রের অধীনে একাধিক উপকেন্দ্র নির্ধারণ করা হচ্ছে। যদিও এভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে কি না সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মুনি বলেন, আপনারা জানেন দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা সবাই অবহিত আছেন। প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম, এখনও আছি। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আরও কয়েক লাখ লোকবল জড়িত। এত সংখ্যক মানুষকে আমরা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না।অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তার ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যাতে পরীক্ষার্থীরাও প্রস্তুতি নিতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা দুর্যোগের কারণে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৩ দিন আগে স্থগিত হয়ে যায়। শুধু এইচএসসি নয়, সব ধরনের পরীক্ষাই স্থগিত হয়। বন্ধ হয় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে চলমান ছুটি সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৩ অক্টোবর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু হার না কমায় ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে অতি দ্রুত সময়ে এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।